রংপুরে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ হাসপাতালে ভর্তি ৯

সাইফুল ইসলাম মুকুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর: গত মঙ্গলবার চিকিৎসারত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলে নড়েচড়ে বসে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। সম্প্রতি রংপুরেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু রোধে নানা প্রচার প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই।

শনিবার সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রোগীদের সাথেই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া ও আলাদা ব্যবস্থায় চিকিৎসার কথা বলছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে আলাদা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসারত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া বুলেট রংপুর নগরীর সদর হাসপাতাল কলোনীর বাসিন্দা ছিলেন। চাকুরী করতে ঢাকার একটি সরকারী দফতরে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই আক্রান্ত হন ডেঙ্গু রোগে। হাসপাতালে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তার ভাইয়ের। তিনি বলছেন, বাড়ি এসে ২ দিন পরে খুব জ্বর হলে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার বলছে আমার ভাইয়ের ডেঙ্গু হইছে। ডেঙ্গুর ট্রিটমেন্ট করা লাগবে। তারপর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানেই তো মারা গেলো।

চিকিৎসা নিতে আসা রিহানা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, যেহেতু আমার রোগীর ডেঙ্গু হইছে তাকে যদি আলাদা করে রাখা হতো তাহলে ভালো হতো। কারণ সে ঘুমাইতে পারছে না। শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছে। এখানে তো আরো রোগী ভর্তি আছে। আলাদা রাখা হলে চিকিৎসাটাও আরো ভালো হইতো।

ফারুক নামে আরেক স্বজন জানান, এখানে তো সব কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে ২দিনে শুধু একটা স্যালাইন দিছে। আর প্যারাসিটামল বড়ি ছাড়া বাকি সব কিনে আনতে হচ্ছে। গরীব মানুষ খরচ কমাতে হাসপাতালে আসা কিন্তু এখানেও কিনেই আনা লাগে। সাশ্রয় আর কই হলো। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চিকিৎসারত ডেঙ্গুরোগীদেরো অভিযোগ চিকিৎসা মিললেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা।

সুরুজ্জামাল নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী জানান, ঢাকা থেকে আসছি আমি ঈদের আগে বুধবার আর আক্রান্ত হইছি আমি রবিবার মানে জ্বর আসছে। রবিবার থেকেই কিছু ক্ষেতে পারছিনা ব্যাথা শুরু হইছে। এর তো হাসপাতালে ভর্তি হলাম এখন এই রাত থেকে একটু আরামে আছি।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত আরেক রোগী জানান, আমি ঢাকার মালিবাগের এক কোম্পানিতে সেলসের কাজ করি। ঈদের পরদিন প্রচন্ড জ্বর আসে। বন্ধুদের সেবায়ও যখন কাজ হচ্ছিলনা তখন বাড়ি আসি। এরপর ভুরুঙ্গামারিতে টেস্ট করাই সেখানে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেখান থেকে ৪তারিখে রংপুরে রেফার্ড করে। এখানে এসে তো কোন সেবায় পাচ্ছি না। সবি তো কেনা লাগতেছে। ২টা গ্যাসের ট্যাবলেট আর নাপা ছাড়া সবই কেনা। ৪ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ১টা স্যালাইন পাইছি। অথচ প্রতিদিন আমাকে ২টা স্যালাইন দেয়া লাগছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন এবং তাঁরা সকলেই ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে এসেছেন বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ ইউনুস আলী। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি জানান, সোমবার সকালে জ্বর নিয়ে ঢাকা থেকে রংপুরে নিজের বাড়িতে যান বুলেট। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে দুপুরেই তাকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *