নজর২৪ ডেস্ক- স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা নিয়ে থানার ভেতরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে প্রবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেত্রী ধর্ষিতাকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি, হুমকি ও দেখে নেয়ার কথা বলে শাসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।
অন্যদিকে, রোববার নির্যাতিত মেয়েটির পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর তার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। তবে মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বুধবার বাকি পরীক্ষা হবে বলে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন।
এদিকে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতি রনিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে নির্যাতিত মেয়েটি অভিযোগ করেছে তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাবা-মাসহ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে তার।
এদিকে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি নির্যাতিত মেয়েটির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন বলে জানা গেছে। তিনি বিস্তারিত ঘটনা শুনেছেন এবং এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন।
বিষয়টি নির্যাতিত মেয়েটি নিশ্চিত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে ফোন করে বিস্তারিত শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছি ৫ সেপেটম্বর তারিখে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করার পর পুলিশ তাকে থানার ভেতরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ভবনে একটি কক্ষে নিয়ে আসে।
রাত ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রোজী রহমান ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ঢুকে তাকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে মামলা কেন করেছো, রনিকে চেনো? তোমাকে দেখে নেয়া হবে। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে তিনি নিজেই তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে শাসান। প্রায় ২৫ মিনিট অবস্থান করে তিনি চলে যান।
নির্যাতিতা নারী আরও অভিযোগ করেন থানার ভেতরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার যেখানে নির্যাতিত নারীদের পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে রাখে সেখানে কিভাবে ওই নেতা প্রবেশ করল আমাকে শাসালো তার বিচার দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যান বলে নির্যাতিত নারী বলেন, এরপর পুলিশ নারী পুলিশ দিয়ে তাকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পর অপরিচিত লোকজনের আনাগোনায় আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে জানান। পরে নারী পুলিশ সদস্যদের অনুনয় বিনয় করে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তবে তিনি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আর যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। কেননা সেখানে রাখার পরেও তাকে হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোজী রহমানের কাছে নির্যাতিতাকে হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান। নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে জানতে কেউ ডাকলে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যখন তখন যেতে পারেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম তাকে কোন হুমকি ধামকি দেয়া হয়নি। সেখানে ৪ জন মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসি পদবির পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, সেখানে তো সিসি ক্যামেরা ছিল।
এদিকে পর পর দু’দিন রনির সমর্থনে তার সমর্থকরা কোতোয়ালি থানার সামনে বিক্ষোভ করলেও সোমবার তাদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। গত দু’দিনের মতো সোমবারও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
সূত্রঃ সময়ের কণ্ঠস্বর