৮ ডিসেম্বর মীরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: ৮ ডিসেম্বর মীরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস, ১৯৭১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মীরসরাইকে হানাদার মুক্ত করে।

 

৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনার পর থেকেই তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মীরসরাইয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন শুরু হয়। নানান ঘটনা পরিক্রমার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার মাহেন্দ্রক্ষণ আসে ৮ ডিসেম্বর। ৮ ডিসেম্বর সকালে সুফিয়া রোড ওয়ার্লেস স্টেশন থেকে একটি পাক বাহিনীর জিপ তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎ পেতে থেকে শত্রুর অবস্থান নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে এ খবর পাঠানো হয়।

 

সকাল ১০টা নাগাদ মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের বিএলএফ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাসহ প্রায় দুইশত মুক্তিযোদ্ধা মীরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকি তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে এক যোগে ঝটিকা আক্রমন চালায়। শুরু হয় পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচন্ড গুলি বিনিময়। পাক সেনাদের অবস্থান ছিল হাইস্কুল (বর্তমান মীরসরাই সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়), থানা, মীরসরাই সি.ও. অফিস। বৃষ্টির মতো গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মনে হলো পাক সেনাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ আসছেনা। মুক্তিযোদ্ধারা সতর্কভাবে শত্রুর অবস্থান লক্ষ্য করে দেখলেন পাক সেনারা পালিয়ে গেছে।

 

মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে পাক সেনাদের আটটি রাইফেল উদ্ধার করে। পাক সেনারা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে বলে পরে জানা যায়। চট্টগ্রামের কোন অঞ্চল তখনো মুক্তির স্বাদ পায়নি। মীরসরাই শত্রুমুক্ত হয়েছে-এ কথা দ্রুত ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। মুহূর্তেই চতুর্দিক থেকে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে মীরসরাই সদরে মিছিল আসতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই অসংখ্য জনতার ঢল নামে মীরসরাই হাই স্কুল মাঠে। মৌলভী শেখ আহম্মদ কবির কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ঘোষণা করা হয়।

 

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল মীরসরাই ভূখন্ড পাক বাহিনীমুক্ত একটি স্বাধীন এলাকা। সে থেকে ৮ ডিসেম্বর মীরসরাইয়ে উদযাপিত হয়ে আসছে স্বাধীনতার শত্রুমুক্ত দিবসটি। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সব উপজেলার মধ্যে একমাত্র মীরসরাই উপজেলা থেকে বেশি মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মীরসরাইয়ের রেল স্টেশন সড়কের মাঝামাঝি লোহার পুল নামক স্থানে ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ওই সময় এই লোহার পুল এলাকা ছিল ওই এলাকার লোমহর্ষক একটি জায়গার নাম। যার কথা মনে পড়লে এখনো মানুষ আঁতকে উঠে। বর্তমানে ওই লোহার পুল নামক বধ্যভূমি স্থানে জেলা পরিষদের অনুদানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে মীরসরাই ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড’ এবং ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এর আয়োজনে র‌্যালী, আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *