বকেয়া বেতন-ভাতা ও চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী

মিজানুর রহমান, শেরপুর প্রতিনিধি: সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টার’ এ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চার বছরের বকেয়া বেতন-ভাতা ও চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন।

বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের ‘কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টারে’ এ কর্মসূচী পালন করা হয়। এসময় সহকারী হোস্টেল সুপার পলি আক্তার, হর্টিকলচার ট্রেড প্রশিক্ষক স্মৃতি রাণী, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ট্রেড প্রশিক্ষক সার্থী আক্তার, হিসাব সহকারী সুরমা সরকারসহ অন্যান্য ট্রেডের প্রশিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নেন।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালে শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা অধিদপ্তরের আওতায় ‘কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টার’ এর ভিীত্তপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অবকাঠামোগত কাজ শেষে তৎকালীণ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী ও তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এটি উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নার্সারী/হর্টিকালচার, কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামতকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইলেকট্রনিক্স এসেম্বিলিং টেকনিশিয়ান, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সুইং অপারেটর এবং ইলেকট্রিশিয়ান ও হাউজ ওয়্যারিং মিলে ৬টি ট্রেডে বেকার নারীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। তিন মাস মেয়াদী প্রতিটি ট্রেডে ১০ জন করে প্রতি সেশনে ৬০ জন করে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ১ হাজার ২০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্সণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ২২৫ জন নারী বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরী করে তাদের বেকারত্ব গুচিয়েছেন। কম্পিউটার ও বিউটিফিকেশন এ দুটি ট্রেডের যন্ত্রপাতি আনা হলেও প্রশিক্ষক নিয়োগ না থাকায় তা চালু হয়নি।

২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-পরিচালককে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলী করার পর থেকে হোস্টেল কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হাজারো বেকার নারীর কর্মসংস্থান তৈরির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে যায় কর্মরত ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন শুরু করেন। বর্তমানে ৬ তলা বিশিষ্ট আধুনিক এ হোস্টেল ভবন ছাড়াও বিভিন্ন ট্রেডের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও ফার্নিচার নষ্ট হতে চলেছে।

প্রশিক্ষক সাথী আক্তার জানান, শত শত বেকার ও অল্প শিক্ষিত নারী এখান থেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেরা দক্ষ হয়েছেন। অনেকেই চাকরী করে বেকারত্ব গুচিয়েছেন। প্রকল্প পুনরায় চালু না হওয়ায় ও মেয়াদ বৃদ্ধি না পাওয়ায় নারীদের এ অগ্রযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। আমরাও বেকার হয়ে পড়েছি।

প্রশিক্ষক স্মৃতি রানী জানান, নালিতাবাড়ী তথা শেরপুর জেলার পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণের এ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। বর্তমানে চাকুরীতে আবেদনের বয়সও নেই। এখন আমরা যাব কোথায়?

সহকারী হোস্টেল সুপার পলি আক্তার জানান, দেশে মোট ৮টি ‘কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টার’ রয়েছে। অন্যগুলোর কার্যক্রম চালু রয়ে গেলেও নালিতাবাড়ীর এ কেন্দ্রটি চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আমরাও মানবেতর জীবন-যাপন করছি।

এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *