নজর২৪ ডেস্ক- রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় হয়েছে আজ। এ জন্য বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় মামলার একমাত্র আসামি মজনুকে। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
আদালতে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশ সদস্যদের প্রতি হাত উঁচু করে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় মজনু। কী কারণে এই হুঁশিয়ারি, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনও কিছু বলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মজনুর কাঁধের ওপরে একটি শার্ট রাখা ছিল। সেটি নামাতে বললে সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। আদালতে নেওয়ার পর সে বলতে থাকে, ‘আমারে ছাইড়া দেন। আমি তো কোনও অন্যায় করিনি। আমি এতিম। আজ এক বছর যাবৎ আমি জেলে। আমি ধর্ষণ করিনি।’
আদালতের এজলাসে দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে হাজির করা হয় তাকে। খুবই উচ্চস্বরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে মজনু। সে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ভবন থেকে লাফ দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমারে ছাইড়া দেন। আমি রিকশা চালাই। জেলে আমাকে ডাল আর কচুর ভর্তা খেতে দেয়। আমাকে ছেড়ে না দিলে লাফ দিয়ে মরে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, ধর্ষণ করছে চারজন মিলে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। আমি গরিব দেখে আমাকে ধরেছে। আমার নাম মজনু পাগল, আমার গায়ে শক্তি নাই। আমাকে ছেড়ে দেন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় দিকে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন ওই ঢাবি ছাত্রী। এরপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী। ডাক্তারি পরীক্ষায় নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে।
রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান তিনি। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন সহপাঠীরা।
পরদিন সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি উত্তর)। ৮ জানুয়ারি মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৯ জানুয়ারি সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশকে অনুমতি দেন আদালত। ১৬ জানুয়ারি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত।
গত ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু বক্কর। ২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ভার্চুয়াল আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।