নজর২৪ ডেস্ক- শেরপুরের নকলা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ১৪ বছরেও শেষ হয়নি। ভবন নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে তা আটকে আছে মামলার জালে।
এর ফলে অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন ঘটনায় দমকল বিভাগের কর্মীরা দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে নকলা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নকলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতায় নির্মাণের শেষ সময়ে ২০০৯ সালে মামলা দায়ের হওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন ওই ভবনটি এখন প্রায় ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে। এজন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সুবল চন্দ্র দেবনাথ জানান, নকলা উপজেলা স্টেশনে মোট সাতজন কর্মী নিয়োজিত থাকলেও তারা কাজ করছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। কিন্তু বেতন নিচ্ছেন নকলা উপজেলা থেকে। নকলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে সরকারিভাবে একটি গাড়ি, পানির পাম্পসহ সকল যন্ত্রপাতি বর্তমানে শেরপুর জেলা সদরে ব্যবহার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নকলা উপজেলার বাদাগৈড় মোড়ে বাজারদী মৌজায় ১৯১ দাগের ২৬৩ নং খতিয়ানে ৩৩ শতাংশ জমি উপ-সহকারী পরিচালক ফায়ার সার্ভিস শেরপুর নামে ২০০৭ সালে রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে নকলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা ঠুকেছেন স্থানীয় কেশব নাথ প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ নামে দুই ব্যক্তি।
মামলার বাদীরা জানান, তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের আমলে তাদের ক্রয়কৃত জমি খাস খতিয়ানের জমি দেখিয়ে উপ-সহকারী পরিচালক ফায়ার সার্ভিস শেরপুরের নামে অধিগ্রহণ করে নামজারি করে দেয়া হয়। এর প্রতিকার চেয়ে তারা আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং তাদের পক্ষে রায় আসে। বর্তমানে মামলাটি বাদীর পক্ষে হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সরকার উপযুক্ত মূল্য পরশোধ করলে মামলাটি তুলে নেয়ার কথা জানান কেশব নাথ প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি বলে জানান তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে নকলা পৌরসভার জালালপুর এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করায় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শেরপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ৮টি পরিবারের প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদ আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় নকলার সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নকলায় দ্রুত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালুর দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে উরফা ইউনিয়নের শালখা গ্রামে এক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। এছাড়া গত এক বছরে এভাবে নকলার বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উরফা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম তালুকদার ভূট্টো বলেন, ‘প্রতিবছরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নকলা উপজেলায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনায় দমকল বিভাগকে খবর জানানোর প্রায় এক/দেড়ঘণ্টা পর তারা ঘটনাস্থলে যেতে সক্ষম হয়। আর তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। জটিলতা নিরসন করে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দ্রুত এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি চালু করা দরকার।’
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন শাহ বলেন, ‘নকলা উপজেলা একটি জনবহুল এলাকা। এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের খুবই প্রয়োজন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অভাবে প্রতিনিয়ত অনেক দুর্ঘটনা সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। শেরপুর ফায়ার সার্ভিসকে খবর পৌঁছানোর পরেও তাদের গাড়ি আসতে সময় লাগে।’
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জটিলতা নিরসনের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব হবে।’