নজর২৪ ডেস্ক- ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারকে ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। চরভদ্রাসনের ইউএনওর ফোনে ফোন করে গালিগালাজ করেছেন ভাঙা উপজেলার এসিল্যান্ডকে।
চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার এই দুটি ঘটনা ঘটে। এই দুটি ঘটনার ভিডিও এবং অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর জেলা শাখা গতকাল রোববার সভা করে এই ঘটনার প্রতিকার চেয়েছে। জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
জানা জায়, চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শনিবার সন্ধ্যায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ান।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৬ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৬ ভোট। নির্বাচনের চার দিন আগে হঠাৎ করে কাওসারের পক্ষে মাঠে নামেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকরা।
সমাবেশে নিক্সন বলেন, “প্রশাসনের মধ্যে লুকাইয়া থাকা ওই জেলা প্রশাসক এ নির্বাচনে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নৌকার কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে, পিটাইছে ওই জেলা প্রশাসক।”
“ওই জেলা প্রশাসক একজন রাজাকার” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তা না হলে মাত্র চারটি ইউনিয়নে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের যেখানে পাইছে সেখানে আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসনকে সাবধান করব; আপনি ফরিদপুরে দেখেছেন অনেক বড় নেতার পতন হইছে, ওই বরকত-রুবেলের যত অন্যায়, যত দুর্নীতি তার সাথে আপনার জেলা প্রশাসনের লোক জড়িত ছিল। বরকত রুবেলের বিচারে হলে ওই জেলা প্রশাসকের বিচার হবে। কারন ওই দিপু খাঁর বালির ব্যবসার ভাগ ওই জেলা প্রশাসক পায়।”
জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি যত বড় উপদেষ্টার নাতি হোন না কেন আপনি নিক্সন চৌধুরীর সাথে চোখ রাঙাইয়া কথা বলবেন না। আমি যদি আমার জনগণ নিয়া আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামি, আমি যদি নেতা কর্মীদের নিয়ে নামি তবে আপনি এক মিনিট দম নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।”
বক্তব্যের এই পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন সমাবেশে থাকা সমর্থকরা।
নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, “উনি এক উপদেষ্টার ভয় দেখান, উনি মনে করেন ওই উপদেষ্টাই ওনার ক্ষমতা। আরে এমন কত উপদেষ্টা দেখলাম মিয়া, জাফরউল্যাহ কাজীরই বেল নাই, আর আপনি উপদেষ্টার ভয় দেখান। সরকারি চাকরি করেন বিএনপি নেতাদের চেয়ারম্যান বানানোর জন্য না। আমরা এর বিচার অবশ্যই করব এবং আমরা এর বিচার চাই।”
চরভদ্রাসন সহকারী কমিশনারকে গালাগাল
নির্বাচনের দিন চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার জেসমিন সুলতানার উদ্দেশেও অশালীন ভাষায় গালাগাল দেন। চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) জেসমিন সুলতানা বলেন, “বুথের ভিতর সিগারেট খাওয়া ও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করায় সাংসদের লোককে আটক করা হয়। সাংসদ ফোনে আমাকে হুমকি-ধামকি দিলে আটকৃকতকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
ইউএনওর ফোনে ওই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উদ্দ্যেশে বলেন, “শুয়রের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্ছা…. আমার লোকদের গাড়িতে উঠায়ছে ক্যান; এখনই ছাড়তে বলেন। ওর কত বড় সাহস শুয়ারের বাচ্চা, আমি চরভদ্রাসন আসতেছি, ওরে আমি দেখতেছি।”
এই উপ-নির্বাচনে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হলে নির্বাচনে কী সমস্যা হয় তা বোধগম্য নয়।”
সাংসদ মুজিবর রহমান নিক্সনের হুঁসিয়ারি বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হরে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ভাঙার এসিল্যান্ড তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি ইউএনও কে জানান এবং ইউএনও ফোন করে জানান এসিল্যান্ড ফোন ধরছেন না। তখন এসিল্যান্ড সম্পর্কে ‘বকাবাজি’ করেন।
জেলা প্রশাসক সম্পর্কে বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দিনের ঘটনা ঘটনা এবং তাঁর অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, কাউকে জরিমানা করায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ প্রকাশ যাতে অন্য রকম না হয় সে জন্য ডিসি সম্পর্কে এভাবে কথা বলেছেন।