নজর২৪, সিলেট- আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয়) আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলার এজলাসে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন নির্যাতিত গৃহবধূ।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নির্যাতিত গৃহবধূকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে আদালতে নিয়ে যান।
আদালত সূত্র জানায়, রোববার দুপুর ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে নির্যাতিতা গৃহবধূকে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালতে তার পুরো জবানববন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়।
এদিকে এরইমধ্যে রোববার সকালে গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার এক নম্বর আসামি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে ছাতক থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ছাতক থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকালে ছাতক খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় থানার এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
এর আগে সকাল ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে মামলার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকেও গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে মামলার দুই আসামি গ্রেফতার হলেন। দুজন আসামি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী।
মামলার আসামিরা হলেন- এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল হাসান ও মাহফুজুর রহমান মাসুম। এদের মধ্যে চারজন ওই কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রণজিৎ সরকার বলয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ঘটনার পরপরই অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার রাত ২টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি দা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শাহপরান থানা পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে অস্ত্র আইনেও একটি মামলা করে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন নেতাকর্মী। এরপর দুইজনকে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে তারা। খবর পেয়ে রাতে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।