নজর২৪, সিলেট: সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে শুক্রবার সন্ধ্যায় গণধর্ষণের শিকার হন এক নববধূ। তার স্বামীকে বেঁধে রেখে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডার। ঘটনার রাত সাড়ে ১০টায় স্বামীসহ ওই নারীকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার সংবাদ প্রচার প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ছবি ভাইরাল হয়। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে। এখন পর্যন্ত পুলিশ আসামিদের হদিস করতে না পারলেও অভিযুক্তরা ফেসবুকে সরব রয়েছেন।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এই মামলার দুই আসামিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। স্ট্যাটাসে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। গণধর্ষণ মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম শনিবার সকাল ১১টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
তিনি লেখেন— ‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ, আমি রবিউল হাসান। আমি এম সি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকেই চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকেই জানেন। গতকাল এম সি ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সাথে, কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে অনেক অনলাইনে নিউজ করিয়েছেন, আমি এম সি কলেজ ছাত্র, কিন্তু আই হোস্টেলে কখনোই ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আমি এই নির্মম গণধর্ষণের সাথে জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্যকাজের সাথে জড়িত থাকি তা হলে প্রকাশে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সাথে জড়িত নই। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংঘটন ছাত্রলীগের নাম কোনো অপপ্রচার করবেন না। এমসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারী সকল নরপশুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এরআগে এই মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে লেখেন— ‘এরকম জঘন্য কাজের সাথে আমি জড়িত না। যদি জড়িত প্রমাণ পান প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলবেন। একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে সুইসাইডের দিকে নিয়ে যাওয়া আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন।’
ফেসবুকে সরব থাকার পরও আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা আসামিদের গ্রেফতারে সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। পৃথক স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ফেসবুক ওয়ালে আসামিদের স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি নজরে ছিল না। এ বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করব।
উল্লেখ্য, গণধর্ষণের ঘটনায় শনিবার সকালে ৯জনকে আসামি করে সিলেট শাহপরাণ থানায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার এম সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। রাতে ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সাইফুরের রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রচুর পরিমাণে দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
ধর্ষিতার স্বামীর দায়েরকৃত মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়। এজহারনামীয় আসামিরা হলেন, এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।