স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে- সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় রবিউল ইসলাম (৪৩) নামে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এক সরকারি কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ।
ইউএনও কার্যালয়ের মালি পদে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় ৫০ হাজার টাকা চুরির দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আটক রবিউল পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে।
শনিবার বিকালে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এই হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি এবং মই স্বীকারোক্তি মতো উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এই মামলায় আজ শনিবার বিকেল ৫ টায় রবিউল ইসলাম ফরাসকে সিনিয়র জুটশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেন এর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র ওসি ইমাম আবু জাফর। আদালত বিচারক পর্যালোচনা শেষে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
অন্যদিকে ইউএনও’র উপর হামলার মামলার প্রধান আসামী যুবলীগৈর বহিস্কৃত নেতা আসাদুল হককে ৭ দিনের রিমান্ড শেষে আজ শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়।
তাই রবিউল ইসলাম ফরাসকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণের আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং এ রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ছাড়াও দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম এবং পিপিএম ( বার), ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যা প্রচেষ্টা চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফরসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ৫০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে ৪ মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে রাখা হয়।
সিসিটিভির ফুটেজ এবং সাময়িক বরখাস্ত ঘটনার বিবেচনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে স্বীকারোক্তি জবানবন্দীতে সে ঘটনার সবকিছু জানায়।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে ২০১৯ সালের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পায়। ৪ মাস আগে মালি রবিউল ইসলাম ফরাস ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ ইউএনও কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়।
এ ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে।
প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এবং তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের উপর হামলা করে হত্যার প্রচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত দু’ জনকেই রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইউএনও ওয়াহিদাকে এয়ার এম্বুল্যান্স করে নেয়া হয় ঢাকার নিউরোসাইন্স মেডিকেল হাসপাতালে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে করা হয় অস্ত্রোপচার। এখনো তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তিনি সুস্থ্য আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তবে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকধীন তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ সুস্থ্য হলেও তাঁর কোমরের নিচের অংশ এখনও অবশ রয়েছে।
অন্যদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার প্রত্যাহারকৃত ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামকে পুলিশ লাইনস রাখা হয়েছে। তার স্থলে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রংপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর মো.আজিম উদ্দিনকে।