লাভের আশায় আগাম জাতের আলু চাষে ঝুঁকছেন চাঁদপুরের কৃষকরা

চাঁদপুর প্রতিনিধি- চাঁদপুরে আগাম জাতের আলু বীজ বপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে জমিজুড়ে এখন শুধুই আলু চাষীদের পদচারণা। আলুর চড়া মূল্যের মাঝেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আলু বীজ সংগ্রহ করে সময়ের আগে আলু রোপণকে ঘিরে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে মাঠজুড়ে। বাজারে আলুর দাম চড়া, তাই মৌসুমের প্রথম দিকে আগাম জাতের আলু উৎপন্ন হলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এমনটাই আশা কৃষকদের।

 

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে চাঁদপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার মে.টন এবং চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার হেক্টর।

 

আলু চাষীগণ চলতি বছরে জেলায় ব্যাপক আলু চাষাবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এবারে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে চাষাবাদকৃত আলু রোপণের সময় কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে আগাম এই চাষ প্রক্রিয়া।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে এবার ১,৪৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ১০ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩, ৬৪০ মে.টন । মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬৬ হাজার মে.টন ।

 

হাজীগঞ্জে ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩,২০০ মে.টন ।শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৫০ মে.টন। কচুয়ায় ২,০৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫,৩২০ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১,৭৬০ মে.টন। হাইমচরে ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩,৫২০মে.টন।

 

চলতি মৌসুমে উচ্চ ফলন প্রাপ্তির লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে আলু ও সবজি চাষের ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ, সুষম মাত্রার রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি অফিস।

 

ইতিমধ্যে এসব উচু জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের বিভিন্ন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এছাড়াও নদী পার্শ্ববর্তী এবং চরাঞ্চলের জমিতে আগাম জাতের আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আলুর বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের।

 

জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসময় কৃষক কবির হোসেন বলেন, বাজারে আলুর যা দাম, যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছি। এবার আবহাওয়া অনুকূল। বীজের দাম কম। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপন করছেন বলে জানান।

 

বেকার যুবক আবদুর রহমান মুন্নাও এবার ১ একর জমিতে আগাম আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আগামজাতের আলু রোপনে খরচ হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা। বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন। বাজারে আগে আলু তুলতে পারলে খরচ বাদে লাভ পাওয়া যাবে প্রায় ৩০ হতে ৩৫ হাজার টাকা। আগাম আলু তুলতে পারলে দাম বেশি পাব বলে আশা করি।

 

আলু চাষি রফিক বলেন, চড়াদামে আলুর বীজ কিনে দামের আশায় আগাম আলু রোপণ করেছি। জানি না আলুর ফলন কেমন হয়।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, অর্থকরী ফসল হিসেবে আলু চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এ এলাকায় আলু চাষ করে অধিকাংশ কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে এবারে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়ছেন সেটা উত্তোরণের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই কৃষক আগাম জাতের আলু লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমান আলু দাম চড়া তাই কৃষকেরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে আমরা তৎপর রয়েছি।

 

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জিত জেলা। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের স্থান। চাঁদপুরের জলবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা, ডাকাতিয়া,মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ, নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *