এসি বিস্ফোরণ কেন হয়? দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন

লাইফস্টাইল ডেস্ক- ঠান্ডা বাতাস নিতে গিয়ে অনেক সময় এসি হয়ে উঠতে পারে বিপদের কারণ, যার সাক্ষী হয়ে থাকল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি মসজিদ। বিভিন্ন কারণে এই এসির বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই সঠিক নিয়ে এসি ব্যবহার না করলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

 

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক হিটিং, কুলিং অ্যান্ড রেফ্রিজারেশন সংস্থা অ্যারিস্টায়ারের মতে, নিয়মিত এসির ভালো যত্ন নিলে ব্যবহারকারীরা বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। সংস্থাটি বিস্ফোরণের কিছু প্রাথমিক কারণ উল্লেখ করে বছরে কমপক্ষে দুইবার এসি সার্ভিস করার পরামর্শ দিয়েছে।

 

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলেন, এসি দুর্ঘটনার পেছনে তিন চারটি কারণ রয়েছে।

 

”অনেকে রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। ফলে এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চলতে হয়, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে সেখানেও কারিগরি ক্রুটি দেখা যায়, যা অনেক সময় আগুনের সূত্রপাত করতে পারে।”

 

তিনি বলছেন, ”এসি দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফলে কারিগরি ক্রুটির কারণে এসিতে আগুন ধরে যেতে পারে বা এসির গ্যাসে আগুন লেগে সেটি ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

 

অনেক সময় উইন্ডো এসির সামনে জানালা বা দরজার পর্দা চলে এলে বাতাস চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। সেটিও এসিকে গরম করে তুলতে পারে বলে তিনি জানান।

 

এসি দুর্ঘটনার যেসব সম্ভাব্য কারণ জানা যাচ্ছে:
অনেক পুরনো বা নিম্নমানের এসির ব্যবহার
রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার না করা
কম্প্রেসরের ভেতরে ময়লা আটকে জ্যাম তৈরি হওয়া
এসি থেকে গ্যাস লিক হওয়া এবং সেটি রুমে বা এসির ভেতরে জমে থাকা
দীর্ঘক্ষণ টানা এসি চালানো, যার ফলে এসির প্রেশার বেড়ে যায় এবং সেটিকে গরম করে তোলে
এসির ভেতরের বা বাইরের বৈদ্যুতিক তার নড়বড়ে হয়ে থাকা, যা শর্টসার্কিটের তৈরি করতে পারে
বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজের কারণে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ওপর চাপ তৈরি হওয়া
অনেকদিন এসির সার্ভিসিং না করানো
বজ্রপাত বা বৃষ্টির সময়ে এসি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ভালো আর্থিং ব্যবস্থা না থাকলে এটিও এসির দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

 

যেভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে:

 

বুয়েটের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলছেন, অন্য যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মতো এসিরও বিশেষ যত্ন নেয়ার দরকার আছে। তাহলে একদিকে যন্ত্রটি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

 

””আমাদের দেশে এসির রক্ষণাবেক্ষণে খুব অবহেলা করা হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই যন্ত্রটি কিন্তু বাসার অন্যসব যন্ত্রের মতো নয়। এটির জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি। প্রতিমাসে ফিল্টার পরিষ্কার রাখা, বছরে একবার অন্তত পুরো যন্ত্রটির সার্ভিসিং করানো, আউটডোর ইউনিট পরিষ্কার রাখতে হবে।’

 

এসি সার্ভিসিং এক্সপার্ট দুলাল দাস বলছেন, ”বছরে অন্তত একবার পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। বিশেষ করে শীতের সময় দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পরে গরমের আগে আবার চালু করার আগে অবশ্যই সার্ভিসিং করে নেয়া উচিত।”

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসি দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।

 

পেশাদারদের মাধ্যমে নিয়মিত সার্ভিসিং করানো
রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক মাত্রার এসি নির্ধারণ
নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি কেনা
দীর্ঘসময় একটানা এসি না চালিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া
বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা।
হাই ভোল্টেজ এড়াতে বাড়িতে সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।
বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় এসির ব্যবহার বন্ধ রাখা। এছাড়া বাড়ির ছাড়ে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

 

এসি এক্সপার্ট দুলাল দাস বলছেন, একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়া আউটডোর মেশিন এমন স্থানে বসাতে হবে, যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *