ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। যদিও এ কাজটি সবাই সহজে করতে পারেন না। কারো ভুল মনে পুষে না রেখে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার মতো মহৎ এ কাজটি যদি আপনি করতে না পারেন তবে আজ অন্তত একবার করে দেখতে পারেন। কারণ আজ ৭ অক্টোবর ‘জাতীয় ক্ষমা ও সুখ দিবস’। ক্ষমা করা ও সবার সঙ্গে সুখ উদযাপনের দিন এটি।
বেশিরভাগ মানুষই অন্যের প্রতি ক্ষোভ ধরে রাখেন ও প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। যা মোটেও ঠিক নয়, এটি নিচু মানসিকতার প্রকাশ করে। সবচেয়ে সর্বোত্তম উপায় হলো, যে আপনাকে আঘাত করেছে তাকে ক্ষমা করুন। এতে আপনি দুর্বল হবেন না, বরং আরও বেশি সফল ও সুখী হবেন।
দিবসটির উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ককে সারিয়ে তোলা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। একইসঙ্গে ক্ষমা, শান্তি, আনন্দ ও ভালোবাসার বিষয়গুলো বুঝতে সবাইকে উৎসাহিত করাই এ দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনটি পালিত হয়। রবার্ট ময়ার্স নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফরগিভনেস অ্যালায়েন্স দিনটি চালু করে। দারুণ এই দিবস কিন্তু পালন করা যেতে পারে। যাঁরা ভুল বা অন্যায় করেছেন আপনার সঙ্গে, ক্ষতি করেছেন, আপনাকে অপমান–অপদস্থ করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের ক্ষমা করে দিন। দেখবেন ঘৃণা, অভিযোগ, দোষারোপ, অভিশাপ, প্রতিশোধের মানসিকতামুক্ত জীবন কতটা সুখের!
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্ষোভ বা সম্পর্কের তিক্ততা ধরে রাখেন, তাদের তুলনায় যারা ক্ষমার অভ্যাস করেন, তারা বেশি সুখী হতে পারেন। ক্ষমা করার উল্লেখযোগ্য উপকারী দিকগুলো হলো উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য, চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস, বিষণ্নতার লক্ষণ কমা, নিম্ন রক্তচাপ, একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমসহ (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) অনেক কিছু।
ক্ষমা করে সুখী হওয়ার এ দিবস অন্যদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার আদর্শ সুযোগ এনে দেয়। যা দীর্ঘমেয়াদে বিপুল স্বাধীনতা ও সুখ বয়ে আনতে পারে। ক্ষমায় সুখ বেছে নেওয়ার দিবসটি বিভিন্ন উপায়ে উদযাপন করা যেতে পারে। এ দিনে জীবনকে আরও সুখী করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—
অন্যদের ক্ষমা করার অনুশীলন
বলা হয়ে থাকে, কোনো তিক্ত বা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ক্ষমা না করার ফলে তিনিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান, যিনি নিজের মধ্যে ক্ষোভ ধরে রেখেছেন। এমনকি, কখনো কখনো দেখা যায় বিষয়টি অপর ব্যক্তি জানেনও না কিংবা তিনি মারা গেছেন। আপনার অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করার কঠিন মানসিক কাজটি আপনাকে মুক্তি ও সুখ এনে দেবে। এটি রাতারাতি সম্ভব না-ও হতে পারে, এমনকি একজন কাউন্সেলর বা প্রশিক্ষকের সহযোগিতাও লাগতে পারে। তবে, যারা ক্ষতি করেছে তাদের ক্ষমা করতে চাওয়া সম্পর্ক মেরামতে একটি বিশাল পদক্ষেপ!
অপরের কাছে ক্ষমা চাওয়া
প্রত্যেকেই মানুষ, তাই যে কারোর মাধ্যমে অপরের ক্ষতি হয়ে যায় অনেক সময়। কখনো কখনো লোকেরা দ্রুতই নিজের করা ভুল জানতে পারেন, তবে অনেকে বহু বছর পরেও এটি উপলব্ধি করতে পারেন না। ক্ষমা ও সুখের দিবস তাই অতীতে কারো সঙ্গে এমন কিছু হয়েছে কি না, তা ফিরে দেখার উপযুক্ত সময়। এ দিনে যাদের সঙ্গে নিজের ভুল হয়েছে, তাদের ফোনকল করা, তাদেরকে চিঠি লেখ বা ক্ষমা চাইতে ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে দেখা করা যেতে পারে। এভাবে পরস্পরের মাঝে পুনরায় ভালো লাগা ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়।
নিজেকে ক্ষমা করা
অনেক সময় নিজেকে ক্ষমা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষমা করে সুখী হওয়ার এ দিবসের সম্মানে কেন নিজেকে ক্ষমা করার কিছু উপায় চেষ্টা করে দেখবেন না? অতীতের বিভিন্ন ভুলের জন্য রাগ ও বিরক্তি ত্যাগের ক্ষমতা নিজেকে মানসিক সুখ ও প্রশান্তি এনে দেয়। নিজেকে ক্ষমা করার উপায় নিজের অনুভূতিগুলোকে সম্মান করা, নিজের কার্যকলাপ স্বীকার করা নেওয়া, নিজের প্রতি সহানুভূতির অনুশীলন করা এবং ঘটে যাওয়া ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জীবনধারায় যথাযথ পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
সূত্র: ডেইজ অব দ্য ইয়ার
এসএইচ