কপালে টিপ পরা নিয়ে শিক্ষিকা লতা সমাদ্দারকে পুলিশি হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ইস্যুতে আবারও সামনে চলে এলো নারী স্বাধীনতার বিষয়টি। নারীর চলাফেরা, পোশাক, সাজগোজ আসলে কে ঠিক করে দিবে? এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
ঘটনা শনিবারের। তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দার- অভিযোগ করেন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি টিপ নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে। ‘টিপ পরছোস ক্যান’ –এমন কটুক্তির বিপরিতে প্রতিবাদ করায়, তার গায়ের ওপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে ওই ব্যক্তি। এই ঘটনার জন্য রবিবার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন লতা সমাদ্দার।
লতা সমাদ্দারের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নারীই নিজের টিপ পরা ছবি পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান। নারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পুরুষরাও। নিজেদের টিপ পরা ছবি শেয়ার করছেন তারা।
এদিকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের শিল্পী-কুশলী কপালে টিপ লাগানো ছবি পোস্ট করে যার যার মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। শিল্পীদের সম্মিলিত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এমন প্রতিক্রিয়া শেষ কবে এসেছে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
শিল্পীদের এই প্রতিবাদের পালে মূলত হাওয়া লাগে কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফার কণ্ঠস্বর ধরে। তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘দেশের কোন আইনে আছে টিপ পরা যাবে না?’
অভিনেতা সাজু খাদেম টিপ পরা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘লাল টিপ…লাল সূর্য…।’
অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর লেখেন, ‘টিপের ওপর এমন আঘাত-বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত। নারীর স্বাধীনতার ওপর আঘাত।’
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি বেশ কড়া ভাষায় বলেন, ‘আমার শরীর, আমার সাজ, আমার সংস্কৃতি- আমার স্বাধীনতা। এখানে নাক গলাতে এলে নাকটা কেটে দেওয়া হোক। তীব্র প্রতিবাদ জানাই, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। অপশক্তির দাপট ঠেকানো হবেই।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী দীপান্বিতা মার্টিন তার ছবির সঙ্গে মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের একটি উক্তি প্রকাশ করেন। সেটি হলো, ‘You can’t depend on your eyes. When your imagination is out of focus.’
অভিনেত্রী ফারজানা চুমকী বলেন, ‘টিপ আমি পরবোই।’
অবসকিওর ব্যান্ড নেতা টিপু বলেন, ‘টিপ, ভালোবাসার চিহ্ন।’
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ছবি প্রকাশ করে হ্যাশট্যাগ দেন #টিপপরছোসকেন!
অভিনেত্রী সানারেই দেবী শানু লেখেন, ‘ধর্ম খুব সংবেদনশীল নিজস্ব বিশ্বাসের বিষয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অধিকার কারও নেই। টিপ পরার দায়ে প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দারকে জনৈক পুলিশের ইভটিজিং ও বাইক দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই অসংযত আচরণের বহিঃপ্রকাশকে অবদমিত করা না হলে ক’দিন পর আর টিপ পরার বিষয়টি আলাদা করে ধর্মীয় ভাবনায় ভাগ হয়ে যাবে। সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা।’
সঞ্চালক ত্রয়ী ইসলাম লিখেছেন, ‘টিপ মানেই আমি বাঙালি।’
দেশের অন্যতম বাচিক শিল্পী নাজমুল হুসাইন বলেন, ‘বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম, দোজখ দেখার এবং সামান্য অভিজ্ঞতার; কিন্তু কোনোভাবে দোজখের সন্ধান পাচ্ছিলাম না। এবার মনে হয় পাব। টিপ পরলাম, দোজখ ঘুরে আসার জন্য। ফিরে এসে আপনাদের জানাবো আমার অভিজ্ঞতা। দোজখে যাওয়ার আশীর্বাদ চাই।’
অভিনেতা-প্রযোজক স্বাধীন খসরু লেখেনে, ‘সংহতি টিপ।’
নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী মাসুদ হাসান উজ্জ্বল ছবি ছাড়াই প্রতিবাদ করেন। তার ভাষ্য, ‘যেকোনো ঘটনা নিয়ে অতি চর্চা করতে গিয়ে লেজে-গোবরে করা আমাদের মজ্জাগত সমস্যা। টিপকাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্য কোনোভাবেই সুস্থ মানসিকতার হতে পারে না! পুলিশের উচিত বাহিনী থেকে এই অসুস্থ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, এটা পুলিশের ইমেজের জন্যই জরুরি।’
এ ছাড়াও ক্যাপশন ছাড়া কপালে টিপ পরা ছবি প্রকাশ করে এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়েছেন অভিনেতা প্রাণ রায়, আনিসুর রহমান মিলন, মনোজ প্রামাণিক, অভিনেত্রী নাজনীন হাসান চুমকী, সুষমা সরকার, কুসুম শিকদার, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, আয়েশা মনিকা, চিত্রনায়িকা অধরা খান, ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা ও কণ্ঠশিল্পী মিতু কর্মকার প্রমুখ।