নজর২৪ ডেস্ক- একের পর এক বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। উত্তরের জেলা নীলফামারীতে এবার হু হু করে বাড়ছে আলুর দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। অবস্থা এমন যে এখন মোটা চালের চেয়ে আলু কিনতে কেজি প্রতি বাড়তি গুনতে হচ্ছে গড়ে ১০ টাকা করে।
গত সোমবার (৭ অক্টোবর) আলু পাইকারি বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকালে ওই আলু খুচরা বাজারের প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়।
দেশে আলু হয় নানা জাতের। তবে বছরের এই সময়ে সব আলুর দাম বাড়ে। এবার এই কৃষিপণ্যটির দাম বেড়েছে ভয়াবহ বেশি।
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী বন্ধু আড়তের মালিক মোতালেব হোসেন বলেন, গত সোমবার আলু বিক্রি হয়েছে ৪০-৪২ টাকা কেজি দরে। সেখানে আজ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০-১২ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এমন মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। চড়া দামের এই বাজারে সবজিসহ পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও শুকনা মরিচ, গুঁড়া হলুদ ও আলুর দামও বেড়েছে তর তর করে।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে ওই বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুসহ সবজির দাম বেড়েছে তিন গুণ। পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে আলুর কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা।
ওই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সফিজুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে আড়তে প্রতি মণ আলুর দাম ১ হাজার ৪৪০ টাকা। আর আজ মঙ্গলবার তা বেড়ে প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি বলেন, গৃহস্থ পর্যায়ে আলুর বীজ সংরক্ষণ ও সবজির দাম বাড়ার কারণে আলুর ওপর চাপ বেড়েছে। তাই গত এক সপ্তাহে আলুর প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০-১২ টাকা। ওই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম একই কথা বলেন।
ওই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আলম মিয়া, বুলুমিয়া ও ইলিয়াস আলী বলেন, ‘এখন গ্রাম পর্যায়ে আলু চাষি ও গৃহস্থরা হিমাগার থেকে আলুর বীজ উত্তোলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাছাড়া, মোট উৎপাদিত আলুর তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খুচরা বাজারে এর চাপ পড়েছে।’
জেলা শহরে কিচেন মার্কেটে কথা হয় গৃহিণী রেহেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কারেজ আলু ১০ কেজি কিনেছি ৩৪০ টাকায়। ওই আলু এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কিনেছে ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে। বন্যার কারণে জমিতে সবজির আবাদ কম হওয়ায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে দাম বেড়ে যায়। এসময় আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যায় পড়তে হয়। বাড়তি দাম দিয়ে আলু কেনায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আর বাজারের খুচরা দোকানিরা এই সুযোগে বাড়তি দাম হাতিয়ে নিচ্ছে।
জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার হোটেল কর্মচারী রহিদুল ইসলাম জানান, এক কেজি আলুর দাম ৫০-৫২ টাকা। অপরদিকে, প্রকার ভেদে কেজি প্রতি চালের দাম ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অথচ চালের চেয়ে আলুর দামই বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর হঠাৎ আলুর দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো করোনার ভয়াবহ সময়ে ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকহারে আলুর ব্যবহার হয়েছে। এতে আলুর আড়তসহ স্থানীয় বাজারে আলুর সরবরাহ কমে যায় এতে দাম বাড়তে থাকে। এছাড়া আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে আলুর দাম বাড়ার পেছনে।
এর মধ্যে রয়েছে জমিতে আলুর উৎপাদন কম হওয়া, চলমান বন্যায় নতুন আলুর ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, অন্যান্য সবজির দাম বাড়ার সঙ্গেও আলুর দাম বাড়ার কারণ জড়িত আছে। তবে এখন স্থানীয় পর্যায়ে আলু খুব বেশি নেই, আলুর যোগান কমে আসায় দাম বাড়ছে। বাজারে নতুন আলু উঠলে দাম কমবে।