টাঙ্গাইলে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ‘কোঠা ঘর’

অন্তু দাস হৃদয়, স্টাফ রিপোটার- বেশি দিন আগের কথা নয়, আবহমান বাংলার প্রতিটি গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই নজরে পড়ত কোঠা ঘর বা মাটির দালান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি এ ঘরে গরম এবং শীতকালে নাতিশীতুষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজ করে। তাই এ ঘরকে গরীবের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) ঘরও বলা হয়ে থাকে। গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের ফলে এখন টিন ও ইট-পাথরের দালান তৈরি হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারগুলোও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হলেও বাড়িতে টিনের ঘর তৈরি করেছেন। এ কারণে বিলুপ্তি হয়েছে মাটির তৈরি কোঠা ঘর।

 

টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী, গজারিয়া, কালমেঘা, যাদবপুর, কালিয়া, কাকড়াজান, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান, বহুরিয়া, দাড়িয়াপুর, হাতিবান্ধা ও সিলিমপুর গ্রামের আনাচে-কানাচে কোথাও আর ঐতিহ্যবাহী কোঠা ঘর চোখে পড়েনি। অথচ এইতো কয়েক বছর আগেও মাটির দেয়ালের উপর টিন-খড়ের চালার ঘরই ছিলো আভিজাত্যের প্রতীক।

 

সিলিমপুর গ্রামের বোরহান উদ্দিনের (৭২) সঙ্গে আলাপকালে স্মৃতিচারণকরে এ প্রতিবেদককে বলেন, যেখানে লালমাটি বা চিপটে মাটি সহজলভ্য সেখানে এ ধরনের ঘর বেশি তৈরি করা হতো। এ মাটির দালানকে স্থানীয়ভাবে কোঠা ঘর বলে থাকেন। ঘরের গাঁথুনি দেয়ার সময় কারিগররা লাল মাটিকে ভালোভাবে গুড়ো করে তাতে ছোট ছোট করে পাটের আঁশ বা খড় কেটে দেন। এতে মাটি দীর্ঘদিন স্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে। কারিগররা একটি ঘরের চারদিকে এক স্তরে ২ ফুট বাইট মাটি দিয়ে দুই থেকে তিনদিন রোদে শুকিয়ে আবার গাঁথুনি শুরু করতেন। এভাবে একটি ঘর তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লাগত।

 

এ কোঠা ঘর তৈরি করার উপযোগী সময় হচ্ছে শীতকাল বা শুষ্ক মৌসুম। কোঠা ঘর তৈরি করে ছাঁদ হিসেবে বাঁশ ও খড়ের চালা বাসানো হয়। এসব কারণে এমন ঘর সবসময় ঠান্ডা থাকে। এমনকি আগুন লাগলেও ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র সহজে পুড়ে না। ঘরের ভেতরে ও বাইরে আকর্ষণীয় করার জন্যে গ্রামীণ আল্পনায় গৃহবধূরা কাঁদা-পানি দিয়ে প্রলেপ লেপে দিতেন। আবার অনেকে তাতে রং বা চুন দিয়ে বর্তমানের ইটের দালানের মত চকচকে করে তুলতেন। দূর থেকে দেখে মনে হতো এটি একটি পাকা বাড়ি।

 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সখীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাকিল আনোয়ার বলেন, নতুন করে কেউ আর মাটির ঘর তুলছেন না। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির ফলে এ অঞ্চলে ইট, বালু সহজলভ্য হয়েছে। সকলেই ইট পাথরের ভবন তৈরি করছেন। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য কোঠা ঘর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *