নজর২৪ ডেস্ক- তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়ার বামনের টেক এলাকার রাস্তা থেকে সরুগলি পেরিয়ে একটি ফটক। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় দু’টি ভবন। বাম পাশে খালি জায়গা এবং ডান পাশে অন্য একটি ভবন পেরিয়ে ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্স। ছয় কাঠা জমিতে ৭ তলা ভবনের মালিক নার্গিস আক্তার। তিনি গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে বাদল হাজী ওরফে ড্রাইভার মালেকের (৬৩) প্রথম স্ত্রী। বাড়ির পাশে পড়ে আছে ১০/১২ কাঠার খালি প্লট। তবে ভেতরে কোনো প্রাডো গাড়ি দেখা যায়নি।
ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তমতলা পর্যন্ত পুরো সিঁড়ি টাইলস করা। পুরো ভবনটিতে ১৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনের তৃতীয়তলার দরজা দেখেই বোঝা যায় সেখানে ভবন মালিকের বাস। তৃতীয়তলার পুরো অংশে পরিবার নিয়ে বাস করেন ড্রাইভার মালেক। ২০১৪ সালে তিনি এই বাড়িটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন।
আবদুল মালেকের ফ্ল্যাটের সামনে যে দরজা লাগানো আছে, তা কোনো রাজপ্রাসাদ বা রাজহমলের দরজার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দরজাটি সম্পূর্ণ কাঠের, নিপূণ কারুকাজ করা। কারুকাজ নকশা রাজা-বাদশাহদের প্রাসাদের দরজার মত। এছাড়া ফ্ল্যাটের ভেতরেও রয়েছে বিলাসবহুল সাজসজ্জা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি তৃতীয় শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মচারীর থাকার জায়গা।
তবে বামনার টেক এলাকায় অনেকেই জানতেন, আবদুল মালেক সরকারি বড় পদস্থ কর্মকর্তা। তার চাল চলন ও আলিশান বাড়ি, দামি সরকারি প্রাডো গাড়িতে চলাফেরা দেখে এলাকাবাসী বুঝতেই পারতেন না যে, তিনি একজন গাড়িচালক।
বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোটিপতি গাড়িচালক আবদুল মালেককে গ্রেফতারের পর তার অগাধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন গাড়িচালকের দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া বিশাল সম্পদের ফিরিস্তি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মালেককে। মালেক গ্রেফতার হওয়ার পর বাড়ির রাজকীয় ডিজাইনের দরজার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। শুধু দরজা নয় আরো অনেক কিছুই আছে যা দেখে সবার চোখ ছানাবড়া!
সামাজিক মাধ্যম জুড়ে এখন তারই সম্পদের চর্চা। ফেসবুকে অনেকেই লিখছেন, আমাকে স্বাস্থ্যের ড্রাইভার বানিয়ে দাও। আমি ড্রাইভার হতে চাই। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, একজন ড্রাইভারের যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে ডিজি, সচিব, চেয়ারম্যানদের অবস্থা কি হবে?
এদিকে র্যাব জানায়, রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়ার সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল এই মালেক। তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালেকের ঢাকায় অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লট, কামারপাড়ায় এক বিঘা জমি, বামনেরটেক এলাকায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর সাততলা বাড়ি (বাড়ি নং ৪২ হাজী কমপ্লেক্স), স্ত্রীর নামে একটি সাততলা বাড়ি, হাতিরপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।
এছাড়া গবাদিপশুর বৃহৎ খামার, মাছের ঘের ও পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। হাতিরপুল ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটের পেছনে নির্মাণাধীন মালেকের ১০ তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন।
এটি দেখাশোনা করেন তার ছোট ভাই আবদুল খালেক। খালেক অধিদফতরের পার শাখার পিয়ন হিসেবে কর্মরত। মালেকের বহু সম্পদ খালেকের স্ত্রীর নামে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত চারটি বেসরকারি ব্যাংকে মালেকের নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব টাকা তার স্ত্রী, ভাই খালেক ও এক ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক মালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগ দেন ১৯৮৬ সালে।