নজর২৪ ডেস্ক- জেঠাতো বোনের বাসায় থেকে বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন এক তরুণী। সেসময় ভোর তখন আনুমানিক ৪টা। রাস্তায় লোকজন খুব কম। গাড়ি থেকে অন্য সব যাত্রী নেমে পড়েছেন। হঠাৎ গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ভেতরের প্রায় সব লাইট। এরপর পালাক্রমে গাড়ির ভেতরই ইজ্জত লুটে নেয় তারা। তখন তাদের আমি ধর্মের বাবা ও ভাই ডেকেই রক্ষা পাইনি।
তিশা প্লাস নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা নগরীতে ফেরা গণধর্ষণের শিকার এক তরুণী সেই রাতের ভয়াবহ বর্ণনা সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই দিচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল (২৬) ও হেলপার বাবু শেখকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সুপারভাইজার (৩২) আলম পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত দুইজনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বাসচালক আরিফ হোসেন সোহেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার নেউরা গ্রামের শরীফ হোসেনের ছেলে ও হেলপার বাবু শেখ ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কামিনারবাগ গ্রামের শেখ ওয়াজেদের ছেলে। তারা দুজনই সদর দক্ষিণ থানার নোয়াবাড়ি (পদুয়ার বাজার) ও মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় বসবাস করেন।
এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। এরপর আদালতে জবানবন্দি শেষে বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
তরুণীর পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই তরুণী শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার জেঠাতো বোনের বাসায় যায়। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফেরার উদ্দেশে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হয়। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে।
ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা করে ওই তরুণী। পথিমধ্যে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাখে। এতে তারা তাকে সেখানে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে তাকে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু বাসের চালক ওই তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়।
এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাবু শেখের ঘরে নিয়ে পুনরায় তাকে ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে তাকে চলে যেতে বলে। পরে তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে ঘটনা জানায়।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে ধর্ষিতার মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওইদিন রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন।
ধর্ষিতার মা বলেন, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। করোনার কারণে সে ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসে। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হয়। তিনি তার মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসটির মালিক এই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ওই পরিবহনের এমডি দুলাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮ নম্বর গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার এ ঘটনা করেছে জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দুইজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।