নজর২৪ ডেস্ক- ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে এবার হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসে মাদ্রাসার মজলিশে শূরা কমিটি। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী।
মজলিশে শূরা সদস্য আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তিনি তার দায়িত্ব (মহাপরিচালক) শূরার ওপর অর্পণ করেছেন। শূরা সদস্যরা পরবর্তীকালে মহাপরিচালকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বৈঠকে আরও দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। হুজুর জীবিত থাকা অবস্থায় সবসময় দারুল উলুমের উপদেষ্টা হিসাবে থাকবেন। মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা নুরুল ইসলাম জাদিদকে আজীবনে জন্য মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, আর কোনও ছাত্রকে হয়রানি করা হবে না।
সভায় শূরা সদস্যদের মধ্যে মেখল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নোমান ফয়েজী, নানুপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী ও মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আহমেদ দিদার, মাওলানা ফোরকান আহমেদ, মাওলানা বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মাদ্রাসার আন্দোলনরত ছাত্র এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানির আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিলো। আনাস মাদানি বাবার পাশে থেকে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করে পুরো মাদ্রাসা নিজের আয়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিশেষ করে আল্লামা শফীর পর আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর অবস্থান থাকলেও তাকে কোনঠাসা করে সব ক্ষমতা নিজের করায়ত্বে আনতে আনাস দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র-শিক্ষকদের বিতাড়িত করা হয়। এতে মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিতব্য হাইয়াতুল উলিয়ার অধীনে কওমি মাদ্রাসাগুলোর মাস্টার্স সমমানের পরীক্ষা নিয়ে মাদ্রাসায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব আনাস মাদানি। এই পরীক্ষায় বাবু নগরীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ছাত্রদের পরিচয়পত্র না দেওয়া, ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন-হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
এসব অভিযোগে বুধবার বাদ জোহর থেকে শত শত ছাত্র মাদ্রাসায় বিক্ষোভ শুরু করে। রাতেই মাদ্রাসার সুরা কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করেন। তবে ছাত্রদের আরও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ থাকেন আল্লামা আহমদ শফীসহ সব শিক্ষক। রাত সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসে মাদ্রাসার মজলিশে শূরা কমিটি। ওই বৈঠকে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী। একই সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা নুরুল ইসলামকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মসজিদের মাইকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মেকাবেলায় রাতেও আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনির সদস্যরা মাদরাসার বাইরে অবস্থান করেন।