অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞাপন নির্মাতা বহু পরিচয়ে পরিচিত তিনি। তার ক্যারিয়ারে শুরুটা হয়েছিল একজন থিয়েটারকর্মী হিসেবে। চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে কাজ শুরু করেন তিনি।
সত্তর দশকের শেষ দিকে তিনি টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন। আশির দশকে হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় এক নাম। কথা হচ্ছে- অভিনেতা আফজাল হোসেনকে নিয়ে।
১৯৫৪ সালের ১৯ জুলাই সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই অভিনেতা-নির্মাতা-চিত্রশিল্পী। সম্প্রতি গ্রামে ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফিরেছেন তিনি।
একুশে পদকপ্রাপ্ত নন্দিত এই অভিনেতা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের গ্রাম নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাম পারুলিয়া। যখনই গ্রামে যাই ভালো লাগে। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। যদিও এই সময়ে গরম বেশি থাকে এবং বাতাস কম থাকে। তারপরও চেনা গ্রাম, চেনা বাড়ি, চেনা জায়গা, সবকিছু মিলিয়ে ভালো লাগা কাজ করে নিজের ভেতরে। পাখির ডাক, গাছের সবুজ পাতার ঘ্রাণ মায়ার হাতছানিতে বারবার ডাকে।’
‘তবে খারাপ লাগার কারণ আমাদের সময়ের কেউ এখন গ্রামে নেই, বন্ধু-বান্ধবও নেই। সবাইকে মনে পড়ে। আমার বয়সের মানুষজন কমে গেছে। পারুলিয়ায় গেলে তাদের কথা মনে পড়ে। তারা থাকলে আরও ভালো লাগত। দেখা হত, সময় কাটত। কিন্তু, তারা নেই। পারুলিয়া গেলে আমাদের সময়ের মানুষ এবং বন্ধু-বান্ধবদের খুব মিস করি।’
আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের যৌবন পর্যন্ত গ্রামটি অসাধারণ ছিল। সেই সময়ে গ্রামে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ হত। এখন নেই। সেই যাত্রাপালা নেই, সংস্কৃতি চর্চা নেই। ঈদে, পূজায় কত আনন্দ করতাম সবাই মিলে। সারাবছর কোনো না কোনো উৎসব লেগেই থাকত। এবারও পারুলিয়া গিয়ে সেসব সুন্দর সময় ও দিনের কথা মনে পড়েছে, মিস করেছি।’
‘আমার মনে হয় কোনো গ্রামেই এখন আর আগের মতো সেইসব দিনগুলো নেই, হারিয়ে গেছে। গ্রামে তখন সুন্দর একটা প্রাণ ছিল। সেই প্রাণটাও কমে এসেছে। আমার ধারণা কোনো গ্রামেই আগের মতো প্রাণ নেই। গ্রামের সব মানুষের একসঙ্গে হওয়ার একটি বিষয় ছিল, তাও কমে গেছে। পরস্পরের মধ্যে গভীর বন্ধন ছিল, সেটাও কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আগের মতো আন্তরিকতাও নেই। তবুও গ্রামটাতো আমার। নিজের গ্রামের জন্য আলাদা টান আছে। মায়া ও ভালোবাসা আছে। তাই সুযোগ পেলে ছুটে যাই। এবারও থেকে এলাম কয়েকটি দিন। এতকিছুর পরও বলব, এখনো গ্রামে গেলে চায়ের দোকানে বসা যায়, মানুষের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়। চায়ের দোকানে বসে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়। এটাই বা কম কী?’