সাখাওয়াত হোসেন জুম্মা, বগুড়া: হেমন্ত ঋতুতে ভোরে শিশির ভেজা ঘাস আর ঘণ কুয়াশার উপস্থিতি শীতের আগমনি বার্তার জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে। আর শীত এলেই গ্রামাঞ্চলে জামাই আদরসহ মুখরোচক খাবার আয়োজনের কমতি নেই, বিশেষ করে খেজুর গুড় বা রস দিয়ে তৈরী খাবারগুলোর চাহিদা বেশি।
তাইতো চলতি মৌসুমেও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারো খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা গাছ পরিচর্চা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। গাছিরা বছরজুড়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে খেজুরগাছের রস ঘরে আনার জন্য ব্যস্ততায় দিন কাটাছে।
প্রতিবছরে ন্যায় এ বছরও মৌসুমী গাছিরা কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে ওঠে তাদের নিপুন হাতে গাছের ছালতোলা, চাঁচ ও নলি বসানোর কাজ শেষে রস সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছে। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। উপজেলার দুইটি পৌরসাভা এবং ছয়টি ইউনিয়নে ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সরকারী অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে।
এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি গাছ থেকে ৫ থেকে ৮লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ সম্ভব হয়। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত যেন বাড়ে। আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মানুষদের শীতের সকালের নাস্তাতে মুড়ির সাথে রস না হলে যেন চলে না। শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েস সহ রকমারি খাবার তৈরীতে রস ও খেজুরগুড়ের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। রসের ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকার উপর নির্ভর করে খেজুর গুড়ের মুল্য।
গাছিরা খেজুরের নালিগুড় তৈরী ছাড়াও পাটালী গুড়, বাটি গুড় এবং রস প্রিয় মানুষদের জন্য ফেরী করে রস বিক্রয় করে। দেশজুড়ে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় গাছিদের বাড়ি থেকেই পাইকারী গুড় বিক্রয় করে সময় ও অর্থ দুটোতেই লাভবান হন এ অঞ্চলের গাছিরা। তবে গাছিদের অভিযোগ খেজুর গুড় সংরক্ষনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বেশি দিন বাড়িতে রাখা যায় না।
কথা হয় দুপচাঁচিয়া গুনাহার ইউনিয়নের আমঝুকি গ্রামের গাছি আনছার প্রামানিকের সাথে, তিনি বলেন দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে আমি একাজ করছি। চলতি মৌসুমে ৯০টি মতো গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে সব গাছ আমার একার না। চুক্তিতে অন্যের গাছ থেকে আমি রস সংগ্রহ করে থাকি। আবহাওয়া ভালো থাকলে পর্যাপ্ত পরিমানে গুড় উৎপাদন সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজেদুল আলম বলেন, শীত মৌসুমে খেজুর রস থেকে নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার সম্ভবনা বেশি থাকায় গাছিদের সতকর্তার সাথে রস সংগ্রহ করতে হবে।