বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকা খেলোয়াড় মুশফিকুর রহীম গত রোববারই টি টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। এশিয়া কাপ খেলে মাতৃভূমিতে ফেরার একদিন পরই অবসরের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন তিনি।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) জের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’-এর এই ঘোষণায় সামজিক মাধ্যমে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বেশিরভাগই তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন আরও আগেই মুশির ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরমেটকে বিদায় বলা উচিত ছিলো। কেউ বা বলছেন মাঠ থেকেই বিদায় নিতে পারতেন এই উইকেটরক্ষক- ব্যাটসম্যান।
এদিকে এই ক্রিকেটারের অবসরের সিদ্ধান্তে ভীষণ খুশি বাংলা সংগীতের যুবরাজ আসিফ আকবর। এছাড়া মুশফিকের অনবদ্য অবদান নিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে মুশফিকের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে সেই কথাই জানান তিনি। সঙ্গে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় এই গায়ক।
তিনি লেখেন, ‘মুশফিকুর রহিম, আমাদের গর্বের ধন। আমার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বকালের সেরা উইকেটকিপিং অলরাউন্ডার। মুশফিকের সাথে প্রথম পরিচয় শ্রীলংকার তাজসামুদ্রা হোটেলে, এটা হয়তো উনার মনে নেই। কুমিল্লা থেকে একটা গ্যাং খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। ছোটখাটো মানুষটা একটু রীতির বাইরেই চলতেন। আনন্দ ফূর্তিকে অস্বীকার করার কিছু নেই, সফরে খানিক উদ্বেলিত উশৃঙ্খলতা মন্দ নয়। ক্যাপ্টেন আশরাফুলের মাধ্যমেই পরিচয়। কাজ শেষে সবাই যখন অবসর সময়টায় হালকা পার্টি মুডে থাকে তখনও মুশফিক সিরিয়াস। আমি নিজের চোখে দেখেছি ৯টা ৩০ এ তিনি ডিনার শেষ করেই চলে গেছেন নিজের রুমে, বিশ্রাম এবং মনসংযোগ প্রয়োজন।’
আসিফের ভাষ্যে, ‘একটা সময়ে মুশফিক হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ, দেশের মানুষ ভালোবেসে নাম দেয় মিঃ ডিপেন্ডেবল। টেস্ট আর ওযানডে ক্রিকেটে তাঁর ডেডিকেশন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আমার ভালোই লাগে না, উপভোগ করতে পারি না। মুশফিকের মতো গ্র্যামাটিক্যাল ক্রিকেটারের সাথে এই বিনোদন সর্বস্ব কদর্য ফরম্যাটটা আসলে যায় না। ভারতীয় লিজেন্ড ভিরাট কোহলি একশো সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড করার সক্ষমতা রাখেন। টি-২০ বাণিজ্যিক ক্রিকেটের কারণে তিনি আসলে রেস্টলেস। এই ফরম্যাটে তিনি যদি আর না খেলেন নিশ্চয়ই ক্রিকেট বিশ্বের সুযোগ হবে নতুন ইতিহাস দেখার।’
এরপর আবার মুশফিকের কথায় ফিরে আসেন এই গায়ক, ‘মুশফিক বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মত রাইজিং একটা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিনই তাঁর কাছ থেকে সফলতা আশা করি, অথচ গৌরবময় অনিশ্চয়তার এই খেলায় মুশফিকের অবদান ভুলে যাই মূহুর্তেই। ব্যাপারটা এমন- দিতে পারলে ভালো, না দিতে পারলে দলের বোঝা। অথচ একবারও ভাবি না বাংলাদেশের ক্রিকেট মুশফিকের অনবদ্য অবদান নিয়ে। যাই হোক এটাই নিষ্ঠুর নিয়ম, বাঁচো মরো, ফর্মে থাকতেই হবে।
মুশফিক টি-২০ ফরম্যাট থেকে অবসর নেয়ায় আমি ভীষণ খুশি। দলের এই সিনিয়র ক্রিকেটারের বাকিটা সময় টেস্ট এবং ওয়ানডেতে যথেষ্ট অবদান রাখার সুযোগ আছে। এই ফাঁকে পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারও দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ পাবেন। আমার কাছে মুশফিক ছোট ক্রিকেট প্লেয়িং দেশের বিশাল তারকা। একজন বাংলাদেশি ক্রিকেট ফ্যান হিসেবে আমি মুশফিকের কাছে কৃতজ্ঞ। দেশের ক্রিকেটকে তিনি অনেক দিয়েছেন।
আমার বিশ্বাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ভবিষ্যতে অবসর নিলেও দেশের জন্য তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের খুব প্রয়োজন হবে। তিনি একজন অজেয় ফাইটার, মুশফিকুর রহিম তাঁর জায়গায় ওয়ান অ্যান্ড অনলি। আপনার সুস্বাস্থ্য সফলতা আর দীর্ঘায়ু কামনা করি মিঃ ডিপেন্ডেবল। মানুষের আন্টিসান্টি কথায় কষ্ট নেবেন না, এগুলো একজন স্পোর্টসম্যানের কাছে শুধুই একটু মুচকি হাসির খোরাক মাত্র…ভালবাসা অবিরাম…।’