ঢাকা ১৫ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২রা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২১
নজর২৪ ডেস্ক- কামাল হোসেন শিশির। জন্ম বাগেরহাটের মোংলায়। ‘পুরুষের’ বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাঁর জন্ম হলেও নারীর স্বভাব নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন। এভাবে তাঁর তথাকথিত ‘মেয়েলি আচরণ’ যখন স্পষ্ট হতে শুরু করে, তখন থেকে তিনি সমাজ দ্বারা নিপীড়িত হতে থাকেন। মানসিকভাবে ইতস্ততবোধের শুরুটা মূলত তখন থেকেই। তবুও নানামুখী সামাজিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবনের পথ পাড়ি দিতে থাকেন কামাল।
সমাজের কাছে ধাক্কা খেতে খেতে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে বাগেরহাট ছাড়েন কামাল হোসেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে। ততদিনে তাঁর শারীরিক পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হতে থাকে। সে সময়টায় চূড়ান্তভাবে ‘বুলিয়িং’ বা হেনস্তার শিকার হতে থাকেন। তখনই মূলত তিনি পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের ইচ্ছাপোষণ করেন। তবে এভাবে ‘রূপান্তরে’ সমাজই তাঁকে বাধ্য করেছে, বললেন শিশির।
২০১৬ সালের শেষের দিকে শিশির কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে পুরুষ থেকে রূপান্তরিত নারী হয়ে ওঠেন। তারপর নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন তাসনুভা আনান শিশির। শনিবার সকালে তাসনুভার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
শিশির গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন কি না, সে কথা জেনে নিতে বৈশাখী টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বললেন। তারপর কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে তিনি কথা বলেন।
কথার শুরুতে তাসনুভা আনান শিশিরের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, কেন তিনি রূপান্তরিত নারী হতে চেয়েছিলেন। জবাবে শিশির বলেন, “আমার ‘মেয়েলি স্বভাব’ সমাজ মেনে নিতে পারেনি। তাই আমাকে নিয়মিত ‘বুলিয়িং’-এর শিকার হতে হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, রূপান্তরিত নারী হতে সমাজ আমাকে বাধ্য করেছে—তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
সমাজ কীভাবে বাধ্য করল—সে প্রশ্নের উত্তরে তাসনুভা আনান শিশির বলেন, ‘যখন গ্রামে অর্থাৎ পরিবারের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমার শারীরিক অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন নিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এরপর যখন স্কুল-কলেজে গেছি, পড়ালেখা করেছি—সেখানেও আমার সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি বুলিয়িং-এর শিকার হয়েছি। সে কারণে আমার বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। অথচ, সেখানে আমার কোনো দোষ ছিল না। এটা তো হরমোনাল বা জন্মগত ব্যাপার।’
রূপান্তরিত হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাসনুভা আনান বলেন, ‘রূপান্তরিত নারী হতে প্রথমে আমি বাংলাদেশে ট্রিটমেন্ট নিই। কিন্তু, তাতে আমার কিছু সাইড ইফেক্ট দেখা দেয়। পরে আমি কলকাতায় যাই কাউন্সেলিং-এর জন্য। তারপর সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে আমি পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হই।’
এখন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় কি না, এমন প্রশ্নে তাসনুভা আনান শিশির বলেন, ‘বাগেরহাট থেকে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পর চাচার বাসায় ছিলাম। তারপর থেকে পরিবারের সঙ্গে একটু একটু করে যোগাযোগহীনতা তৈরি হয়। এখন আর তেমন একটা যোগাযোগ হয় না। বাড়িতেও যাওয়া হয় না।
তবে, গতকাল (শুক্রবার) রাতে আমার ভাই আমাকে ফোন করেছিল অনেকদিন পর। সাড়ে তিন মিনিট কথা হয়। আমার চার বোন ও এক ভাই, যাঁরা সবাই বিবাহিত। আর, আমি আসলে পূর্বের অবস্থায় থেকে মা-বাবার কাছে যেতে চাইনি। মানে অবস্থার পরিবর্তন হলে এবং সুযোগ এলে যেতে চেয়েছিলাম। সামনে হয়তো সেই সুযোগ আসন্ন। বাকিটা সময় বলে দেবে।’
বৈশাখী টেলিভিশনে নিয়োগ পেয়েছেন, সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করবেন, কেমন লাগছে এখন—এমন প্রশ্নে শিশির বলেন, ‘বৈশাখী টেলিভিশনের অশোকদা (বার্তাপ্রধান অশোক চৌধুরী) আমাকে ফোন করে বিষয়টি প্রথম জানান। নিয়োগ পাওয়ার খবরটি শুনেই আমি কেঁদেছিলাম। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি সম্মানিত বোধ করছি। নারী দিবসের মতো একটি বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে আমার মতো রূপান্তরিত নারীকে নিয়োগ দেওয়া হল, এটা অতি আনন্দের। এটি সমাজেও একটি পজিটিভ রোল প্লে করবে। যারা আমার মতো, তারাও অনুপ্রাণিত হবে। সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো উদ্যোগ এটি। এবং এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণই বৈশাখী টেলিভিশনের। সত্যিই বৈশাখী পরিবারের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’ সূত্র- এনটিভি
উপদেষ্টা সম্পাদক: নির্মল কুমার বর্মণ
ইমেইল: nojor24@gmail.com
যোগাযোগ: ১৮৫ নতুন এলিফ্যান্ট রোড, রোজ ভিউ প্লাজা, ঢাকা-১২০৫। © স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ | Developed By Bongshai IT