মামলা চক্রান্তের অংশ, প্রত্যাহার না করলে কঠোর পদক্ষেপ: হেফাজতে ইসলাম

নজর২৪, চট্টগ্রাম: আল্লামা শাহ আহমদ শফীর রহ. এর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার আলেম-উলামা ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায় হেফাজত।

 

আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঞ্চালনায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন হেফাজতে ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. নুরুল আবসার আনোয়ার শাহ আযহারী।

 

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আল্লামা আহমদ শফি রহ. এর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলাে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. এর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র মূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। হযরতের ইন্তিকালের তিন মাস পর ঐ কুচক্রি মহল তাঁর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। দায়ের কৃত মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি বলে আমরা মনে করছি।’

 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে দেশবাসীকে জানিয়ে ছিলেন। অনেক আগ থেকে আল্লামা শফীর শারীরিক অবস্থা এতই নাজুক ছিল যে, বেশ কয়েকবারই তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সুতরাং, আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার অভিযােগ তুলে যারা মামলা করেছে, তারা একটি চিহ্নিত দালালগােষ্ঠী।’

 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর জীবদ্দশায় মাদরাসার তৎকালীন শিক্ষাপরিচালক আল্লামা মুফতী নূর আহমদ কে পাশকাটিয়ে সহকারি শিক্ষাপরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ভর্তি ফরম এবং দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের বাের্ড পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রাখেন। অনেক ছাত্রদের বাের্ডিং এর খাবার এবং আবাসিক সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করে। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লামা আহমদ শফি রহ. এর ইন্তিকালের দু’দিন পূর্বে ১৬/০৯/২০ তারিখে সর্বস্তরের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

 

বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী তখন আল্লামা আহমদ শফী রহ. মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার ঘােষণা দেন। বাকি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ১৯/০৯/২০ শনিবার পুনরায় শূরার অধিবেশন আহ্বান করেন। এ ঘােষণার পর মাদরাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে।’

 

কিন্তু পরদিন শূরার সদস্যদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাওলানা আনাস মাদানী অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করলে, পুনরায় ছাত্ররা ব্যপকভাবে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. পুনরায় শূরা আহ্বান করেন। সারা দিন নানা উদ্বেগ উৎকন্টার পর বাদে মাগরিব উপস্থিত শূরা সদস্যগণ আল্লামা আহমদ শফি রহ, সহ মাদরাসা সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে বৈঠকে বসেন।

 

ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি জুলুম-নির্যাতনসহ নানা দুর্নীতি হযরতের সামনে স্পষ্ট হলে, তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি আনাস মাদানীর উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার নিকট ক্ষমতা হস্থান্তর করেন।

 

কিন্তু শূরাসদস্যগণ তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। পদত্যাগে হযরতের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে শূরা সদস্যগণ হযরতকে সদরে মুহতামিম হিসেবে মনােনীত করেন। ইতােমধ্যে আল্লামা আহমদ শফি রহ. অসুস্থতাবােদ করলে শূরার সদস্য এবং সিনিয়র আসাতিযায়ে কেরামের উপস্থিতিতে হযরতকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন ১৮/০৯/২০ তারিখে বেলা ১১ টায় জামিয়ার মুহাদ্দিস এবং বর্তমান মজলিসে ইদারীর সদস্য মাওলানা ইয়াহইয়া সাহেবকে মাওলানা আনাস মাদানী ফোন করেন। ফোনে মাওলানা ইয়াহইয়া হযরতের খোঁজখবর নেন। আনাস মাদানী মাওলানা ইয়াহইয়া কে বলেন, আব্বা এখন কিছুটা ভালাের দিকে।

 

পরদিন বিকালে প্রতিবারের ন্যায় আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য হযরতকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার পর সন্ধা ৬.২০ মিনিটে তিনি ইন্তিকাল করেন। তার ইন্তিকালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরুধী দলীয় নেতৃবৃন্দসহ অন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলারগণ শােকবার্তা প্রদান করেন এবং জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শােক প্রস্তাব গৃহিত হয়।

 

লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, একটি চিহ্নিত দালালগােষ্ঠী আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। সেখানে নানা অনিয়ম এবং ছাত্রদের ওপর অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তােলা হয়েছিল। এছাড়া বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষককে মাদরাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করে বের করে দেয়া হয়েছিল, যা ছিল অত্যন্ত অবমাননাকর। তাদের অনিয়ম ও ক্রমাগত হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারি মাদরাসার ছাত্ররা জুলুমতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লামা শফীকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযােগে দায়েরকৃত মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত উল্লেখ করে হেফাজত নেতৃৃবৃন্দ বলেন, এই মামলা মাদরাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে হয়রানী করার হীন ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়। এ কুচক্রী মহল নিজেদের কর্মফলের পরিণতিস্বরূপ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে ইসলামী নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। এখন পায়ের তলায় মাটি না থাকায় তারা আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে নতুন ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে চক্রান্তে নেমেছে।

 

মামলাটি চক্রান্তেরই অংশ। এর আগে তারা আল্লামা আহমদ শফীর লাশ নিয়েও নোংরা রাজনীতি করে ফায়দা হাসিলে ব্যর্থ হয়েছিল। আল্লামা আহমদ শফী রহ এর জীবদ্দশাতেও তাকে জিম্মি করে কায়েমী স্বার্থ হাসিল করতে দেখা গিয়েছিল। তারাই ওনাকে জিম্মি করে একের পর এক দুর্নীতি ও অনাচার চালিয়ে ওনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলাে।’

 

মাদরাসার শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্রজনতা, ওলামায়ে কেরাম এবং এলাকাবাসী এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলা দ্বারা ফায়দা হাসিল করার সুযােগ তাদেরকে দেবে না, ইনশাআল্লাহ। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি অনতিবিলম্বে দায়েরকৃত এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবাে।

 

হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঞ্চালনায় চলা এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন হেফাজতে ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. নুরুল আবসার আনোয়ার শাহ আযহারী।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি আল্লামা নোমান ফয়েজী, হেফাজতের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া, হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা লোকমান হাকিম।

 

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মোহাদ্দিস মাওলানা ওমর ফারুক, হাটহাজারী মাদরাসার মোহাদ্দিস মাওলানা আহমদ দিদার, হাটহাজারী মাদরাসার মোহাদ্দিস মুফতি জসিম উদ্দীন, হাটহাজারী মাদরাসার মোহাদ্দিস মুফতি কবির আহমাদ, হাটহাজারী মাদরাসার মোহাদ্দিস মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, হেফাজতের তথ্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মাওলানা হারুন ইজহার, মাওলানা ফোরকানুল্লাহ, মাওলানা মীর মোহাম্মদ ইদরীস হাফেজ ফয়সাল ও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *