আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন: মমতাজ

চলতি বছরের শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগীতশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কয়েকদিন আগে কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন এ গায়িকা। দেশে ফিরে দু’দিন রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততায় সময় কেটেছে তার। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আদালতে নিজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া নিয়ে কথা বলার সময় এ মন্তব্য করেন সংগীতশিল্পী মমতাজ।

বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সেখানে এ গায়িকা লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা সবাই আমার ওপর আল্লাহর ওয়াস্তে আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন কারও ক্ষতি না করি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।’

এর আগে একই স্ট্যাটাসে এ গায়িকা ও সংসদ সদস্য পশ্চিমবঙ্গে নিজের নামে মামলা ও আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার ব্যাপারে লেখেন, ‘এ কথা সত্য যে অনেক বছর আগে ভারতে বহরমপুর কোর্টে আমার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের করেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়া। আর ওই ব্যক্তি ছাড়া আমি যেন কারও মাধ্যমে ভারতে কোনো কনসার্ট করতে না পারি। কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া ১৪ লাখ টাকা নেয়ার একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়েছেন তিনি, যার কোনো প্রমাণ এই ১৪/১৫ বছরে কোর্টে দাখিল করতে পারেনি।’

‘এ বছর আমি দুইবার কোর্টে হাজির হই কিন্তু দুঃখের বিষয় মামলার বাদী দুইবারই অসুস্থ বলে কোর্টে অনুপস্থিত থাকেন। তার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাকে হয়রানি করা। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দ্রুত এই মামলাটি যাতে শেষ হয় সেজন্য আদালতকে অনুরোধ করি।’

জনপ্রিয় এই গায়িকা লেখেন, ‘কিন্তু আদালত শেষ যে তারিখটি দিয়েছিল, ওই সময় আমার আগে থেকেই কানাডা একটা প্রোগ্রাম নেয়া ছিল বলে আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আমি আদালতকে এই বিষয় অবহিত করি এবং পরবর্তীতে একটা সময় চাইলে আদালত সেটা গ্রহণ করে আমাকে সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ পুনরায় ডেট দেন। আশা করি আমি ৮ তারিখে হাজির হলে আদালত একটা সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরবর্তী কী করনীয়, তা জানতে পারব।’

জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন মমতাজ। ২০০৪-০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য সেখানকার শক্তি শঙ্কর বাগচী নামে এক ইভেন্ট অর্গানাইজারের সঙ্গে গায়িকার লিখিত চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান শিল্পী হিসেবে মমতাজকে প্রায় ১৪ লাখ রুপির বিনিময়ে বায়না করেছিলেন উদ্যোক্তারা।

অভিযোগ, অর্থ নেয়ার পরও অনুষ্ঠানে হাজির হননি গায়িকা। যথারীতি অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর হয়। চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয় অনুষ্ঠানের আয়োজক শক্তি শঙ্কর বাগচীকে। পরে অর্থ ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন মমতাজ। এরপর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন শক্তি। কিন্তু থানা অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এরপর বাধ্য হয়ে বহরমপুর আদালতের দ্বারস্থ হন শক্তি। মমতাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক ধারায় মামলা করেন। সেই সূত্রে ২০০৯ সালে মমতাজের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। পরে সমন কার্যকর না করায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরই মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে আসেন গায়িকা।

পরে নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শক্তি শঙ্কর বাগচী। ২০১০ সালে নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মামলায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক এক করে তিনবার আগাম জামিন পেয়ে যান গায়িকা ।

এরপর গত ৯ আগস্ট ফের আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যান গায়িকা। বাংলাদেশ হাই কমিশনের বরাত জানানো হয়, একটি কনসার্টের কারণে কানাডায় অবস্থান করছেন গায়িকা। তাই আদালতে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এমন অবস্থায় আগাম নোটিশ থাকার পরও আদালতে গায়িকা হাজির না হওয়ায় ফের তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *