প্রেমিকার সঙ্গে ফোনালাপের পর মৃত তরুণীদের ধ.র্ষ.ণ করত মুন্না!

নজর২৪, ঢাকা- অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া পাঁচ নারীর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের ক্রিমিনাল ডিপার্টমেন্ট ইনভেস্টিগেশন (সিআইডি) ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখতে পান পাঁচ নারীর মরদেহে একই ব্যক্তির শুক্রাণু।

 

সিআইডির ধারণা ছিল এসব নারীর মৃত্যুর পেছনে কোনো সিরিয়াল রেপিস্ট অথবা সিরিয়াল কিলারদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে নতুন মোড় নেয়। মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে শুরু হয় সিআইডির তদন্ত।

 

সিআইডির তদন্তে উঠে আসে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতো। আর এর সঙ্গে জড়িত ওই মর্গের সহকারী ডোম মুন্না ভগত (২০)। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

 

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহকারী ডোম মুন্না ভগত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য আসা কমবয়সী নারীদের ধর্ষণ করত। সে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করত।

 

দুই-তিন বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তবে এর সঠিক সংখ্যা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

 

সিরিয়াল কিলারের খোঁজে

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, শিগগির ওই সিরিয়াল কিলার আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে তদন্তে নামেন তারা। তারা মোহোম্মদপুর ও কাফরুল থানায় হওয়া ৫টি অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।

 

তাতে তারা জানতে পারেন, ৫টি মামলার ভিক্টিমের সুরতহালে কোনও ধরনের জোরজবরদস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তে প্রতিটি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক ভিক্টিম দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৩টি ঘটনায় স্বজনদের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সব মিলিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে আসেন তাদের প্রাথমিক ধারণা ভুল।

 

সন্দেহ লাশকাটা ঘরকে ঘিরে

সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, আবারো বিশ্লেষণের একপর্যায়ে তারা দেখেন ৫ কিশোরীরই ময়নাতদন্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। এরপর তাদের সন্দেহ দানা বাধে মর্গকে ঘিরে। তাদের মনে হয় ময়নাতদন্তের কোনও একসময়ে ওই কিশোরীরা বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছেন।

 

রাত জেগে প্রেমিকার সঙ্গে ফোনালাপের পর ধর্ষণ

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, এক আত্মীয় তরুণীর সঙ্গে মুন্নার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চলছে গেল দু’বছর ধরে। মৃত নারীদের সঙ্গে কেন মুন্না বিকৃত যৌন কাজে লিপ্ত হতো এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানিয়েছে, রাতে প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমালাপের পর সে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না।

 

মুন্নাকে ধরতে সিআইডির অভিনয়

অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের মূল ডোম রজত কুমার। তাকে সহায়তা করে আরও ৫-৬ জন। তার মধ্যে রজতের ভাগনে মুন্না ভগত রাতে মর্গের পাশেই একটি কক্ষে থাকে। মুন্নাকেই সন্দেহ হয় সিআইডির। গুমের শিকার হওয়া এক যুবকের স্বজন সেজে মুন্নার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা।

 

তাদের একজন জানান, বেশ কয়েক দিন লাগাতার তারা মুন্নাকে ফলো করতে থাকেন। রাতে মুন্নাই থাকে এটি নিশ্চিত হতে তারা রাত ১টা বা ২টায়ও মর্গে যান। ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছেন এই চেহারার কোনও লাশ মর্গে এসেছে কিনা। সম্পর্ক গাঢ় হলে, কৌশলে মুন্নার পান করা সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ করেন তারা। ফিল্টার থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএর সঙ্গে মিলে যায় ওই পাঁচ কিশোরীর দেহে পাওয়া ডিএনএর।

 

তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। বিষয়টি আসামি বুঝতে পেরে গাঢাকা দেয়। পরে সিআইডির একটি দল ওই রাতেই ১০টার দিকে মুন্নাকে গ্রেফতার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *