এমপি নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি, হতে পারে মামলা

নজর২৪ ডেস্ক- ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)। ডিসি-ইউএনওসহ নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অত্যন্ত মানহানিকর ও অশ্রাব্য ভাষায় হুমকি ও গালিগালাজ করেছেন তিনি ও তার অনুসারীরা।

 

এ ঘটনায় সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্বাচনকালীন ঘটনা হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপষিদ বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

অপরদিকে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করায় তথ্য পযুক্তি আইনে মামলা করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

 

মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) শেখ রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (ফরিদপুরের ডিসি) আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছি। কারণ এটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়। এখানে যদি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকে, কোনো সমস্যা থাকে- সেটা নির্বাচন কমিশন অ্যাড্রেস করবে।’

 

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচন চলার সময় কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তিনি সেটা করেছেন। এজন্য আমরা অনুরোধ করেছি তারা যাতে ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া উনি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সভা-সমাবেশ করেছেন, ডিসির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সে বিষয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

 

তিনি বলেন, ‘তিনি (নিক্সন চৌধুরী) একজন নারী ইউএনও’র সঙ্গে এসিল্যান্ডকে নিয়ে যে অশোভন উক্তি করেছেন, বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করেছেন, সেটারও আইনগত দিক আমরা দেখছি। আইসিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী এটা তো অপরাধ। সেই অনুযায়ী মামলা করা যায় কিনা সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোর দেখভাল করছি।’

 

‘নির্বাচনের সময় সকল ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। ১৫ দিন পর্যন্ত তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। যারা এভাবে মাস্তানি গুন্ডামি যারা করে তাদের বিরুদ্ধে যদি নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নেয় তবে ভবিষ্যতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবে না। তাদের যদি নিরাপত্তা না থাকে, নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়, এটার যদি কোনো প্রতিকার না হয় স্বাভাবিকভাবেই কেউ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে না।’

 

সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সবকিছু বর্ণনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান হেলালুদ্দীন আহমেদ।

 

বিষয়টিকে নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ অফিসপাড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *