নজর২৪ ডেস্ক- পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে আরও তিন পুলিশ সদস্যকে।
এ ঘটনায় নায়ক থেকে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া। সিলেটের পরিচিতমুখ এসআই আকবর পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায় নিজেকে জড়িত রাখতেন। সিলেটের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল গ্রীণ বাংলার বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
সামাজিক নানা অসঙ্গতি নিয়ে নির্মিত এসব নাটকে বিভিন্ন সময় পুলিশ, বিভিন্ন সময় সমাজ সংস্কারক চরিত্রে ছিলেন তিনি। সিলেটের বিভিন্ন অঙ্গণে সৎ ও মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। কিন্তু রাহয়ান হত্যাকান্ডের ঘটনায় নায়ক থেকে খলনায়কে পরিনত হয়েছেন তিনি।
এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর কাষ্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয়রা রায়হানকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করে এবং ভোর ৬টার দিকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর রায়হান মৃত্যুরবণ করেন।
তিনি বলেন, রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসাই হয়নি। ফাঁড়িতে নিয়ে আসার বিষয়টি সত্যি নয়।
রায়হানের মায়ের কাছে ফোনের বিষয়টি সম্পর্কে আকবর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়টি তার পরিবার ভুল বুঝেছে। এই ফোন থেকে রায়হান ফোন করে তাকে গণপিটুনি ও হাপসাতালে নিয়ে যাওয়ার খবরটি দিতে চেয়েছিলো পরিবারের কাছে। কিন্তু পরিবারের মানুষ এখন ভুল বুঝে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের সময় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান উদ্দিন (৩৪) নামের এক যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতের নখও উপড়ানো ছিল।
রায়হান উদ্দিন সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার তিন মাসের এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতো সে।
রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সে ছিনতাইকারী ছিল। নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ তুলেন। এরপর পুলিশও আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে, রবিবার দিবাগত রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার স্বামীকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে ১০ হাজার টাকা দাবি ও দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ করেন।
এদিকে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়িদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
মেয়র বলেন, সিলেট মহানগর পুলিশ আশ্বস্ত করেছেন তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিবেন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য তদন্তে দায়িদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবির পাশাপাশি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেছেন তিনি।