নজর২৪ ডেস্ক- সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসছে রফতানিমুখী দুই ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকরা। এ কর্মসূচির আওতায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক,চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকরা নগদ সহায়তা পাবেন।
এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। আপাতত পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি শুরু হবে। এতে অর্থায়ন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জার্মানি। এটি সফল হলে দীর্ঘমেয়াদি এ কার্যক্রম চলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দাতাদের অর্থায়নে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকদের একটি ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হবে। এটি সফল হলে সরকার পরবর্তীতে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
বিষয়টির যৌক্তিকতা তুলে ধরে নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিতে রফতানিমুখী শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দুর্ঘটনা ও অসুস্থতাজনিত নানা কারণে এ খাতের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বা কর্মহীন হয়ে দুস্থ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহা’মা’রি সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশের প্রধান রফতানিপণ্যের বাজার ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে এ মহা’মারি’র কারণে রফতানি হ্রাস পেয়েছে। এ সংকটের প্রভাবে দেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাত, তথা তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পে একাধিক রফতানিমুখী কারখানা লে-অফ এবং উৎপাদন সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ বা সীমিতকরণে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারখানা সাময়িক বন্ধ বা উৎপাদন সীমিত হলে শ্রম আইনে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।
তবে, এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসায় ক্ষতিপূরণ প্রার্থির পরে অনেক শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়াও, অনেক অস্থায়ী শ্রমিক আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সব শর্ত পূরণ না করায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এসবের পাশাপাশি, শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে, বা নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরতে না পারলে, তাদের পারিবারিক আয় সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হয়। এ প্রেক্ষাপটে এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানিমুখী খাতের দুস্থ শ্রমিকদের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার এই সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে,যাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফেডারেল জার্মান সরকার অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে।
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০২০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছ— কর্মমুখী তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে যারা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি কর্মহীনতার মুখে পড়েছেন, অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে দুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদেরকে সাময়িক আর্থিক সুরক্ষা প্রদান।
এ কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত প্রত্যেক শ্রমিককে মাসিক ৩০০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে। একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ তিন মাস নগদ সহায়তা পেতে পারেন। তবে নির্বাচিত শ্রমিক এ সময়ের মধ্যে নতুন কর্মে নিযুক্ত হলে এই নগদ সহায়তা পাবেন না। G2P পদ্ধতিতে সরাসরি উপকারভোগী শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ সহায়তা পরিশোধ করা হবে।