চাকরি হারালেন মানবিক পুলিশ ইউনিটের সেই শওকত

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর জোনে কর্মরত আলোচিত কনস্টেবল শওকত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল)।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিসি শাকিলা সোলতানা বলেন, কনস্টেবল হোক বা এসপি হোক, কেউ যদি অসুস্থতা কিংবা কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তখন তাকে নিয়মানুযায়ী শোকজ করা হয়। শওকত টানা ৭১ দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে তাকে শোকজ করা হয়। তবে শওকত শোকজের কোনো জবাব না দেওয়ায় তার নামে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। তারপরও তিনি উপস্থিত হননি। এ কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চাকরিচ্যুতির জন্য সুপারিশ আদেশের পর তার কাছে এটা অপমানজনক মনে হয়েছে। এ কারণে তিনি নিজে থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছেন। যদিও পরবর্তীতে এটি বিবেচনার সুযোগ ছিল না। তিনি আগে থেকে অব্যাহতির আবেদন করলে সেটি বিবেচনা করে দেখা যেত।

শওকতকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশে উল্লেখ করা হয়, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কনস্টেবল শওকত হোসেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন কমিশনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন।

বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় তখন গণমাধ্যমে পুলিশের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *