নজর২৪ ডেস্ক- হাসপাতালের মর্গে আসা মৃত ছয় তরুণীর মৃতদেহ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মুন্না ভগত নামে এক যুবককে। গত দেড় বছরে ছয় নারীর মৃতদেহকে ধর্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ (ডিএনএ ম্যাচ) পেয়েছে সিআইডি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুন্না নিজেও আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সিআইডি বলছে, দেশে এমন জঘন্য অপরাধ ডোমের সহকারী এই মুন্নাই প্রথম করেছে। প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে তার। তবে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা বলছেন, এই শাস্তির বাইরে আরও শাস্তির ব্যবস্থা না করলে, এ ধরনের মানসিক রোগী কখনও সুস্থ হবে না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডা. তাজুল ইসলাম এক অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, ‘দেশে সাধারণ মানসিক রোগীর সংখ্যার চেয়ে যৌনবিকৃত মানুষের সংখ্যা বেশি। মানসিক রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে আসেন বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু যৌনবিকৃত রোগীরা জেনেশুনে অপরাধ করেন। তাই চিকিৎসকের কাছে আসেন না। মুন্না ভগত যে জঘন্য অপরাধ করে আসছিল, সেটা রোগ হলেও সম্পূর্ণ সচেতনভাবেই একজন অপরাধী এসব করে থাকে।’
এই প্রফেসর অব সাইকিয়াট্রিস্ট বলেন, ‘কোনও একদিনের অভ্যাসে মুন্না ভগত এমন কাজ করেননি। ধীরে ধীরে সে সাহসী হয়ে উঠেছে। প্রথম দিকে হয়তো স্বাভাবিকভাবে মৃতদেহের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতো। পরবর্তীতে আরও ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করেছে। হঠাৎ একদিন এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়। তারপর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ভয়টা কেটে যায়। তারপর থেকে শুধু এই ধরনের যৌনবিকৃত আচারণেই সে সুখ বোধ করে। স্বাভাবিক সম্পর্ক তার কাছে তখন ততটা আনন্দদায়ক হয় না। এই রোগকে আমরা নেক্রোফিলিয়া বলে থাকি। এর বিভিন্ন ধাপ আছে। এটা চূড়ান্ত বিকৃত ধাপ।’
ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নেক্রোফিলিয়া রোগীদের আসলে কোনও ওষুধ নেই। কাউন্সেলিং করেও এদের সুস্থ করা সম্ভব না। এরা পরিপূর্ণ যৌন তৃপ্তি পায় এই বিকৃতভাবেই। তবে তাদের দীর্ঘদিন যৌন সম্পর্কিত অঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে শারীরিক কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলিং করলে, এই জায়গা থেকে বের করে আনা সম্ভব।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘যখন মানুষের মধ্যে মানবিকতার পুরোটাই লোপ পেয়ে যায়, তখন সর্বোচ্চ পৈশাচিকতা দেখা যায়। তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। একজন মৃত মানুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা, আমরা এই সমাজে দিতে পারছি না।’
এই মানবাধিকারকর্মী আরও বলেন, ‘এটা কেবল নির্দিষ্ট ওই হাসপাতালের গাফিলতির জন্যে না। বিষয়টি হলো, রাষ্ট্র যখন বিকলাঙ্গ হয়ে যায়, তখনই এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। শুধুমাত্র আমরা একটি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করলে, সেটা সত্যিকারের দৃশ্য হবে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্য যে, একজন মৃত মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা আমরা দিতে পারছি না।’
সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা খুব সচেতনভাবে এই কেসটি নিয়ে কাজ করেছি। এটি এমন স্পর্শকাতর বিষয় যে, আমরা বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। প্রমাণ পেয়েছি। পরে সে নিজেও স্বীকার করেছে। এই অপরাধের জন্য প্রচলিত আইনে যাবজ্জীবন শাস্তির কথা বলা আছে। মুন্নার ক্ষেত্রে আমরা সেটাই আশা করবো।’
সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া মুন্না ভগত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। প্রায় দেড় বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল।
মৃত নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগে গ্রেফতার মুন্না ভগত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।