তিন মাস ধরে চলা সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশে পড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। উত্তেজনা কমিয়ে আনতে এবং অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচাররোধে একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।
প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে এ সব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ ইফতেখার।
রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির ‘সাউদার্ন পয়েন্ট’ এর সম্মেলন কক্ষে বিজিবি ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিপির মধ্যে কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে এ ঐক্যমত হয়।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ এসে পৌঁছায় মিয়ানমারের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে তাদের স্বাগত জানানোর পর শাহপরীর দ্বীপ বিওপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পতাকা বৈঠকে মিলিত হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শো। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।
বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে বিজিবির রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার ব্রিফ করেন।
এসময় কর্নেল আজিজুর রউফ বলেন, ‘উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে প্রথমে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ অক্টোবর। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে আজ নির্ধারণ করা হয়। আজকের বৈঠকটি অত্যন্ত শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাড়াও মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান রোধ সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বন্ধুপ্রতীম ২ রাষ্ট্রের সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, আস্থা ও নির্ভরতার পরিবেশ তৈরির জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্র ও ভারী অস্ত্রের ফায়ারিং, জনসম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে চলমান সংঘাতের জের ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেন কোনো গোলা পতিত না হয়, সেদিকে নজর দিতে বিজিপিকে আহ্বান জানানো হয়েছে।’
মিয়ানমার প্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে সীমান্তে বসবাসরত সাধারণ বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’