৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন কালাম!

মিজানুর রহমান, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: শেখার কোনও বয়স নেই, এই কথার যথার্থ উদাহরণ শেরপুরের আবুল কালাম আজাদ। জীবনের ৬৭ বছর পর, এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।

এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীর চর ইউনিয়নে। বয়স বাড়লেও হাল ছাড়েননি তিনি বরং প্রমাণ করেছেন শিক্ষার কোনও বয়স নেই।

বড় ছেলে অধ্যাপক। মেজো ছেলে সরকারি চাকরিজীবী। ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আর বাবা দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা। কিশোর বয়সের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এসএসসি পাস না করেও তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান। প্রমাণ করেছেন শিক্ষার কোনও বয়স নেই। উদ্যমী এই মানুষকে দেখতে এখন ভিড় বাড়ছে তার বাড়িতে।

জীবনযুদ্ধে হাল না ছাড়া আবুল কালাম আজাদ জীবনের ২২ বছর কাটিয়েছেন ঢাকায় আর ১৮ বছর সৌদি আরবে কাজ করেছেন। এ সময়ে তিন ছেলেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। ২০১৩ সালে দেশে ফিরে শুরু করেছিলেন লেখাপড়া। লিখেছেন কবিতা, ছড়া, গান ও উপন্যাস। ইতোমধ্যে তার লেখা দেহদাহ ও দশরত্ন নামে দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় চন্দ্রবাজ রসিদা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে এসএসসিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে নিয়ে কবিতার বই লিখেছি। দেশের উন্নয়ন নিয়ে আমার লেখা আরেকটি বই ছাপা খানায় দিয়েছি। আমি চাই, আমার একটা বই যেন প্রধানমন্ত্রী দেখেন।

তার মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি কামিল পাস করেছি। আমার বড় ভাই প্রফেসার। একটি কলেজে চাকরি করছেন। আমার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই শিক্ষিত। বাবাও অনেক দিন থেকে বলছেন এসএসসি পরীক্ষা দিবেন। তাই আমরা তাকে সহযোগিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, বাবা যেসব গান, কবিতা, ছড়া ও উপন্যাস লিখেছেন তা পড়ে আমরাও মুগ্ধ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আলম তালুকদার বলেন, তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ায় তিনি আলোচনা এসেছেন। তার লেখার মধ্যে কোনও জড়তা নেই। তিনি সবাইকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার কোনও বয়স নেই। তাকে দেখে অনেকের মনেই শিক্ষার প্রতি নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে। আবুল কালাম আজাদ নিজের প্রতিভা দিয়ে কবিতা, ছড়া, গান ও উপন্যাস লিখেছেন।

কিন্তু একাডেমিক যোগ্যতা অর্জনে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার দৃষ্টান্ত অনেকের মনে নাড়া দিবে। এভাবেই হয়তো তার মতো আরও অনেকে এগিয়ে আসবে শিক্ষা গ্রহণে- এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *