বিমানের পর এবার ড্রোন বানিয়ে তাক লাগালেন সবুজ

অর্থের অভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বন্ধ হয়েছিল সবুজের। তবে তিনি থেমে থাকেননি। ককশিট দিয়ে তৈরি করেছেন চালকবিহীন ছোট বিমান। আকাশেও উড়িয়েছিলেন। বিমানের পর এবার জমিতে কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণ সবুজ সরদার। খবর- ঢাকা পোস্টের

জানা গেছে, ড্রোনটি রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রোন তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এটি দিয়ে আবাদী জমিতে কীটনাশকসহ শুকনা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে।

সবুজ সরদার ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর মহেশপুর গ্রামের ভ্যানচালক একরামুল সরদারের ছেলে। ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন দিনাজপুর শহরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার পর অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি তার। ভ্যানচালক বাবার সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে সবুজের স্বপ্ন ছিল নিজের তৈরি বিমান আকাশে উড়াবেন। শখ থেকে মাত্র ৪৫ দিনে তৈরি করেন চালকবিহীন ছোট বিমান। এরপর স্বপ্ন দেখতে থাকেন কীভাবে মেধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি প্রধান এই দেশের জন্য কিছু করা যায়। শুরু হয় দ্বিতীয় প্রজেক্টের কাজ করা। অর্থাৎ চালকবিহীন ড্রোন তৈরি। তিন মাসের প্রচেষ্টায় সফল হন সবুজ। তৈরি হয় ড্রোন।

এই ড্রোন দিয়ে ধানক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব। তার তৈরি ড্রোন ইতোমধ্যেই এলাকাবাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। কারণ এই ড্রোন দিয়ে ফসলের জমিতে স্প্রে করা যাচ্ছে। ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একইসঙ্গে এটাতে সংযোগ করা হয়েছে জিপিএস। এতে ঘরে বসেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার পলি শিবনগর গ্রামের ফসলের মাঠে চালকবিহীন একটি ড্রোন সবুজ ধান ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছে। তা দেখতে ভিড় জমিয়েছে এলাকার উৎসুক জনতা।

মহেশপুর গ্রামের হামিদুল ইসলাম বলেন, সবুজ লেখাপড়ার পাশাপাশি পাঠকপাড়া বাজারে মোবাইল মেকানিকের কাজ করেন। এরই মাঝে চালকবিহীন বিমান ও জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার ড্রোন তৈরি করে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। তার এই ড্রোন দেখতে স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করে।

সবুজের মা শেফালী বেগম বলেন, অভাবের সংসারে সব সময় এটা-সেটা কিনে টুকটাক কাজ করে সবুজ। বাবার বকুনির ভয়ে অনেক সময় চুপিচুপি এসব কাজ করে। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে যন্ত্র কেনে। ভয়ে অনেক সময় বাবার কাছে যন্ত্রপাতির দাম অনেক কম বলে। এভাবেই আমার ছেলে এসব তৈরি করছে।

ইউপি সদস্য মো. শাহিন সরদার বলেন, হাঠাৎ করে সবুজের এই উদ্ভাবন দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। যা করছে তা দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। কারণ এখন সবকিছু যন্ত্র নির্ভর হয়ে গেছে। তাই সবুজের এই আবিষ্কার যদি সরকারিভাবে কাজে লাগানো যেত, তাহলে দেশের কৃষকের উপকার হবে।

ড্রোন তৈরির কারিগর সবুজ সরদার বলেন, সব সময় ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এর আগে চালকবিহীন ছোট বিমান তৈরি করেছি। কিন্তু সব সময় একটা স্বপ্ন ছিল, কীভাবে কৃষি কাজের জন্য কিছু একটা করা যায়? তারপর শুরু হয় এই ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা। ড্রোন তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে। এখন আমার তৈরি এই ড্রোন আকাশে উড়ে। জমিতে স্প্রে করা যায়। তবে আমি প্রাথমিক অবস্থায় সফল হয়েছি।ড্রোনটি দুই লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে পারে এবং স্প্রে করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, ড্রোন তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এখানে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে পারবে আকাশে। এই ড্রোন দিয়ে ৩০ মিনিটে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব।

সবুজ আরও বলেন, একবার চার্জ করলে ড্রোনটি ৩০ মিনিট আকাশে উড়তে পারবে। রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির সাহায্যে এ ধরনের কিছু উদ্ভাবন করতে হলে প্রয়োজন অর্থের। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি আমাকে সহায়তা করা হতো, তাহলে আরও নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করেতে পারতাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *