সাভার ও আশুলিয়ায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইনের ছড়াছড়ি

মোঃমনির মন্ডল, নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার- ঢাকাসহ আশপাশ জেলাগুলোতে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইনের ছড়াছড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশে গ্যাসের অবৈধ লাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলে আসছে।

 

এদিকে সাভার ও আশুলিয়া হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস থাকলেও ওই এলাকায় গতকাল কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। অথচ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে জোরালো অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল তিতাসসহ অন্যান্য কোম্পানি।

 

তবে এর আগে গত শুক্রবার সাভারের নামা গেন্ডা এলাকায় দুটি পোশাক কারখানা এবং যাদুরচর এলাকার একটি রাসায়নিক ও একটি মিষ্টান্ন কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

 

এ অবৈধ গ্যাস সংযোগকে ঘিরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এই অবৈধ লাইন স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারে না। বছরের পর বছর অভিযান চলে। সাময়িকভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নও হয়। আবার সে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। এ কারণে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন বেড়েই চলেছে।

 

নারায়ণগঞ্জের মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ম্ফোরণে বহু হতাহতের পর সরব হয়েছিল গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তিতাস। জ্বালানি বিভাগও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের। এসব অবৈধ লাইন থেকে যে কোনো সময় আবারও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

জানা গেছে, দেশে সাতটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ শুরু ১৯৬৭ সালের দিকে। প্রথমে দেওয়া হয় ঢাকায়। এরপর দেশজুড়ে গ্যাসের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদেশে গ্যাস নেটওয়ার্কের পরিমাণ ২৪ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিতরণ ও সার্ভিস লাইন প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এই লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব অবহেলার ফলেই নারায়ণগঞ্জের মসজিদে ভয়াবহ বিস্ম্ফোরণ হলো। গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে শুক্রবার রাতে সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও অনেকে।এভাবে জরাজীর্ণ গ্যাস পাইপলাইনগুলো দিন দিন হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, যাচ্ছে প্রাণ। দগ্ধ অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের গেন্ডা, রাজাশন, সিটিলেন, উলাইল, কর্ণপাড়া, হেমায়েতপুর, আশুলিয়ার কবিরপুর, বারৈপাড়া, জিরানী, শ্রীপুর, বাইপাইল, বুড়িরবাজার, ডেন্ডাবর, পল্লী বিদ্যুৎ, শ্রীখন্ডিয়া, গাজীরচট, জামগড়া, বেরন, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, জিরাব, ইয়ারপুর, টঙ্গাবাড়ি, দুর্গাপুর, কাঠগড়াসহ আশুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে ও সাভার পৌর এলাকাসহ গোটা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে গ্যাস বিতরণ কার্যক্রম।

 

সূত্র জানিয়েছে, সাভার এলাকায় সম্প্রতি গ্যাস বিস্ম্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। চলতি বছরের ৫ জুলাই আশুলিয়ার দুর্গাপুরের পূর্বচালা গ্রামের এক বাড়ির রান্নাঘরে গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ম্ফোরণ ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।

 

এছাড়া আশুলিয়ার নরসিংহপুরে তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইনে বিস্টেম্ফারণের হাসিনা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। এতে দগ্ধ হন আরও বেশ কয়েকজন। সাভারে ভাগলপুরে গ্যাসলাইন বিস্ম্ফোরণে স্বামী ও স্ত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন অগ্নিদগ্ধ হয়।

 

এ বিষয়ে তিতাস সাভার এলাকার ডেপুটি ম্যানেজার আব্দুল মান্নান জানান, গত এক বছরে ২৬৫টি স্থানে ৭০টি অভিযানের মাধ্যমে ২০৭ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪২টি স্থানে ৫৮ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *