শিশু জিহাদ হত্যার দেড় মাস পর রহস্য উন্মোচন: খুনি বাবা-মা ও নানা

সাইফুল ইসলাম মুকুল, রংপুর- রংপুরে দেড় মাস পর অজ্ঞাতনামা শিশুর হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই পুলিশ। গত ১৬ জুলাই নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা ফরেস্ট ও সিংগাহাড়া নদীর তীরে একটি তালাবদ্ধ ট্রাংক থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাতে হত্যাকান্ডের শিকার শিশুর পরিচয় ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবা ও সৎ মাসহ আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই একটি ট্রাংক পরে থাকতে দেখে এলাকাবাসি পুলিশকে খবর দেয়। পরদিন পুলিশ ট্রাংকটি খুলে বেডশিট ও কাথা মোড়ানো অবস্থায় একটি অর্ধ গলিত লাশ পায়। পিবিআই রংপুর ক্রাইমসিন সংরক্ষণ করে ও সব বস্তু সাক্ষ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ করে এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। লাশটি ঝলসানো ও অর্ধ গলিত থাকায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ করে সে সময় শিশুটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়।

 

রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি স্পেশাল টিম তথ্য প্রযুুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ১ মাস ১৭ দিন পর অপরাধের মোটিভ, প্রক্রিয়া ও মৃত ব্যক্তির পরিচয় নৃশংসতম হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার একটি এনজিওতে কর্মরত নিহত শিশু জিহাদ (১২) এর বাবা জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

 

আটক জিয়াউর রহমানের স্বীকারোক্তি মতে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় তার ভাড়া বাসা থেকে ২য় স্ত্রী শিশু জিহাদের সৎ মা আলেয়া মনি (১৯) ও তার শ্বশুর আইয়ুব আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়। তার ভাড়া বাড়ি থেকে ইলেকট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়। যার মাধ্যমে জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়।

 

পিবিআই জানায়, ধৃতদের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় শিশু জিহাদের সৎ মা আলেয়া মনি এবং তার বাবা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে শিশু জিহাদের বনিবনা না হওয়ায় তারা একত্রে পরিকল্পিতভাবে গত ১৪ জুলাই রাতে ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। বাসায় ব্যবহৃত একটি স্টিলের ট্র্যাংকে শিশু জিহাদের লাশ পেচিয়ে ভিতরে ঢুকায়। আইয়ুব আলী পার্শ্ববর্তী মীম ভ্যারাইটিজ স্টোর হতে দুইটি চাইনিজ তালা কিনে এনে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে।

 

পরে লাাশ ভর্তি ট্রাংকটি অপসারণের জন্য বিরল হাসপাতালের গেটের সামনে হতে একটি নীল রংগের ছোট পিকআপ ভ্যান ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া করে নদীর ধারে ফেলে রাখে। উক্ত পিকআপের মালিক ও ড্রাইভার ইসমাইলকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। জিহাদ হত্যাকান্ডের এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খুনিরা শিশু জিহাদ হত্যাকা-ে অংশগ্রহণসহ সব বিষয় স্বীকার করেছে।

 

পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের জানান, মামলাটি পিবিআই এসআই মো. ইকরামুল হক এই মামলা তদন্ত করছেন। তাকে পিবিআই-এর একটি স্পেশাল টিম সহায়তা করছেন। মামলার তদন্ত অব্যহত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *