বেনাপোল প্রতিনিধি- বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে থাকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দরে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বেহাল দশা, পণ্য খালাস ও পরীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে জটিলতা আর জায়গা সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাণিজ্যক কার্যক্রম। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে আমদানি রফতানি বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ভারতীয় ট্রাক চালকরা।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাণিজ্য বাড়াতে বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্যে গতি ফিরবে বলেও জানান তিনি।
আজ সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় ট্রাক চালকদের বাণিজ্য বন্ধের হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন।
১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। এ বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে প্রথম থেকেই এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। বার বার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হচ্ছেন।
বন্দরে জায়গার অভাবে দিনের পর দিন পণ্য নিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় লোকশানের পাল্লা ভারি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যার প্রভাব পড়ছে দেশীয় বাজারে আমদানি পণ্যের উপর। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ জানিয়ে ভারতের পেট্রাপোলের বনগাঁ মোটরশ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছে, দ্রুত পণ্য খালাসসহ অব্যবস্থানার স্থায়ী সমাধান না আসলে আজ সোমবার তারা বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিবেন। এতে দুঃচিšতায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর ররহমান জানান, সুষ্ঠু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে সমস্যার অšত নাই। বন্দরের জায়গার অভাব আর খালাসের যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় তারা সময়মত পণ্য নিতে পারছেন না। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতিবছর তারা সরকারকে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছেন। নিরাপত্তা সমস্যায় বার বার অগ্নিকান্ডে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা। দিনের পর দিন খালাসের অপেক্ষায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় আমদানি খরচ বাড়ছে। সন্তোষজনক সমাধানের মাধ্যমে যাতে বাণিজ্য সচল থাকে তার জন্য আলোচনা চলছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারতীয়রা বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ পথে বাণিজ্য বন্ধের যে হুমকি দিয়েছেন তার যৌক্তিকতা আছে। উন্নয়ন নিয়ে বেনাপোল বন্দরের কোনো মাথা ব্যথা নাই। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন কিন্তু পণ্য থাকে সব সময় ২ লাখ মেট্রিক টন।
অবহেলা অযত্ন খোলা আকাশের নিচে এসব পণ্য বৃষ্টির পানি-কাদাতে ভিজে মান নষ্ট হচ্ছে। বার বার বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হলেও নজরদারী কম বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে বেনাপোল বন্দরকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়ার জোর দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট এমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, উন্নয়ন বাড়াতে হলে বন্দরকে নৌ পরিবহনের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের অধীনে নিতে হবে। যা ইতিমধ্যে ভারত সরকার পেট্রাপোল বন্দরে করেছেন।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরের বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ, পণ্যগার বাড়ানো, চুরি রোধে সিসি ক্যামেরা ও বন্দরের চারিপাশে প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।