কান্তার লাশ বস্তায় ভরে সাগরে ভাসিয়ে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ

নজর২৪ ডেস্ক- ঢাকার আশুলিয়ায় কান্তা বিউটি পার্লারের মালিক মার্জিয়া কান্তাকে (২৬) কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেল কক্ষে গলাটিপে হত্যার প্রায় দুই বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য।

 

জানা যায়, স্বামী ও তার এক সহযোগী কান্তাকে নিয়ে ওই হোটেলে পর্যটক হিসেবে ওঠার পর কোনো এক সময়ে তাকে হত্যা করে পলিথিনে মুড়িয়ে খাটের নিচে রেখে দুই খুনি পালিয়ে যায়। এরপর হোটেল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তারা ঝামেলা এড়াতে রাতের অন্ধকারে কান্তার লাশ বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে নিয়ে গিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এভাবে ঘটনাটি আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা এবং খুনিরা এতদিন ধরাছোয়ার বাইরে থাকলেও পিবিআইয়ে তদন্তে বিস্তারিত বেরিয়ে এসেছে।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান জানান, নরসিংদী জেলার বেলাবো থানার সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তা ঢাকার আশুলিয়ায় বিউটি পার্লারের ব্যবসা করতেন। সেখানে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর শহিদুল ইসলাম সাগরের সাথে পরিচয়ের সূত্রে দুই লাখ টাকার কাবিননামায় তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর মার্জিয়া কান্তা জানতে পারেন, তার স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরের আরও এক স্ত্রী রয়েছে। বিষয়টি গোপন করে তাকে বিয়ে করায় সহজে মেনে নিতে পারছিলেন না কান্তা। এ নিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে ‘প্রতারক-লম্পট’ হিসেবে তুলে ধরাই কাল হলো কান্তার।

 

এ ঘটনায় কৌশলের আশ্রয় নেন শহিদুল ইসলাম সাগর। ভারতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কান্তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থেকে তারা প্রথমে শরীয়তপুরের আবাসিক হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনালে এসে রাত কাটান। সেখানে শহিদুলের মামাত ভাই মামুন এসে তাদের সাথে যুক্ত হন।

 

এর পরদিন তারা শরীয়তপুর থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে এসে আবাসিক হোটেল আল-মদিনার একটি কক্ষে ওঠেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলেও ওই কক্ষে তালা ঝুলতে দেখে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এরপর মহিপুর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে কান্তার জামাকাপড় জব্দ করে নিয়ে গেলেও খাটের নিচে লাশ থাকার বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি।

 

এ ঘটনার দুই দিন পর ওই কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। হোটেল ম্যানেজার আমির ও হোটেল বয় সাইফুল বিষয়টি হোটেল মালিক দেলোয়ারকে জানান। এরপর তারা চারজনে মিলে হত্যার আলামত নষ্ট করে লাশ গুমের সিদ্ধান্ত নেন।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত এগারটার দিকে লাশ বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে দোলোয়ার ও আনোয়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুচর এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে সাগরের পানিতে নেমে লাশ ভাসিয়ে দিয়ে হোটেলে ফিরে আসেন তারা। এরপর বিষয়টি নিয়ে আর কোথাও মুখ খোলেননি।

 

এ ঘটনার প্রায় একবছর পর নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে শহিদুল ইসলাম সাগরসহ তার পরিবারের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মার্জিয়া কান্তার বাবা বাদী হয়ে গত ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি হত্যা করে লাশ গুমের মামলা করেন। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে নরসিংদীর বেলাবো থানায় এজাহার হিসেবে গণ্য করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

 

পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অভিযুক্ত স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতারের পর তদন্তের হালে পানি পায়। এরপর সহযোগী অপর খুনি মামাতো ভাই মামুন পিবিআইর জালে চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর ধরা পড়লে তদন্তের আরও গতি পায়।

 

মামুনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে পিবিআই কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আল-মদিনায় বৃহস্পতিবার অভিযানে গেলে খুব সহজেই হোটেল মালিক দোলোয়ার ও তার ছোট ভাই আনোয়ার এবং হোটেল ম্যানেজার এবং বয় মার্জিয়া কান্তার লাশ গুমের সত্যতা স্বীকার করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর কুয়াকাটা থেকে তাদের চারজনকে নরসিংদী নিয়ে যায় পিবিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *