ইবি প্রতিনিধি- নার্সারী শ্রেণীতে পড়ুয়া হরিপুরের ছোট্ট মেয়ে সাদিয়া। মেয়েটা ৩ দিন ধরে কেঁদেছে প্রকৌশলীর হাত থেকে চারা নিবে বলে। বাবা টিপু বিশ্বাস নিরুপায় হয়ে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন চারা বিতরণ স্থলে। গত পহেলা মহররম থেকে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ে নানা প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করছেন ইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আলীমুজ্জামান টুটুল।
তথ্য বলছে, গত ২২ বছরে ১০ লক্ষাধিক চারা বিতরণ করে পরিবেশ সংরক্ষনে অবদান রেখে আসছেন তিনি। তিনি এবং তার সংগঠন গ্রীন চাইল্ড এ সেবামূলক কাজ করে আসছেন। গরিবের বন্ধু নামেও খ্যাতি রয়েছে টুটুলের।
কর্মজীবনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই সমাজের অবহেলিত ও গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন টুটুল। যার প্রতিদানস্বরুপ তিনি বিভাগের শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক এবং দেশসেরা ছয়জনের একজন নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রকৌশলী টুটুল থাকেন কুষ্টিয়া শহরে। কিন্তু সময় পেলেই তিনি চলে যান নিজ গ্রাম হাটশ হরিপুরে। সেখানে গিয়ে তিনি অংশ নেন বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে। এছাড়া গ্রামের গরীব-দুঃখীদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নেন। পরিবেশবান্ধব ও সবুজ বনায়নের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন গ্রীন চাইল্ড নামক সংগঠন। সংগঠনের উদ্যোগে ইবি ক্যাম্পাসে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ে চারা রোপন ও বিতরণ করা হয়। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও তিনি বিভিন্ন জাতের ফলজ,বনজ, ঔষুধি ও ফুলের চারা বিতরণ করেছেন। গত ২২/২৩ বছরে তিনি শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ও হাজার হাজার বাড়িতে ১০ লক্ষাধিক বিভিন্ন জাতের চারা রোপন-বিতরণ করেছেন।
গ্রীন চাইল্ড সংগঠনের আহমেদ সাকিব বলেন, যখন বিশ্বের মানচিত্রে পৃথিবীর ফুসফুস আহতগ্রস্থ,যখন সারা বিশ্ব তোলপাড় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ নিয়ে। তারও দুই যুগ আগে থেকে নীরবে-নিভৃতে বিনামূল্যে মানুষকে বৃক্ষরোপণের উৎসাহ দিচ্ছেন প্রকৌশলী টুটুল।
ফলজ গাছের মধ্যে সাধারনত আম, পেয়ারা, কাঠাল, লিচু, জামরুল, বরই, কামরাঙ্গা, আমড়া ইত্যাদি জাতীয় গাছ বেশী প্রদান করা হয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে এসব গাছে ফল আসে জানালেন তিনি।
ইতোমধ্যে নিজ গ্রামবাসীকে নতুন চমক দেখিয়েছেন তিনি । তারই উদ্যোগে নির্মিত হাটশ হরিপুর বড় জামে মসজিদের ছাদে প্রায় ১০০ প্রজাতির ফুল-ফলের বাগান করেছেন তিনি। ছোট-বড় চারশত টবে বিভিন্ন গাছ শোভা পাচ্ছে এখানে। আর এ কাজে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ করবেন তিনি। মানু্ষকে রুফ গার্ডেনে উৎসাহিত করার জন্য এটা করেছি বলে জানালেন টুটুল।
চাকরীর পাশাপাশি তিনি ইউটিউবে বাড়ির ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। নিজের অর্জিত অর্থের কিছু আর ইউটিউব থেকে প্রাপ্ত অর্থের সবটাই তিনি এসব কার্যক্রমে ব্যয় করেন।
১০ লক্ষাধিক চারা বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রথমে যখন আমি সামাজিক কাজ শুরু করি তখন লিটন নার্সারী থেকে কিছু গাছ কিনতাম। এগুলো আমার গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতাম। অনেক সময় লিটন নার্সারীর মালিক আমাকে অনেক টাকার গাছ বাকীও দিতেন, পরে তা পরিশোধ করতাম।এভাবেই পথচলা, আর এভাবে চলতে চলতে বিতরণ করে ফেলেছি ১০ লক্ষ গাছের চারা।
তিনি বলেন, আমি সব সময় দামী চারা দেয় যাতে সহজে গাছে ফল আসে এবং বাচ্চারা উৎসাহিত হয়। আমার হাতের একটা গাছ নিতে ওরা ব্যাকুল থাকে। তাদের এ ব্যাকুলতাই আমার জীবনের স্বার্থকতা।
অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। কিন্তু তার মাঝে কিছু কর্ম রেখে যেতে পারলে মানুষ উপকৃত হবে আমার আত্মা শান্তি পাবে। এজন্যই আমি এগুলো করে মজা পাই।