শসা চাষ পাল্টে দিয়েছে রূপসার ২৮ গ্রামের চিত্র

নজর২৪ ডেস্ক- আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা খেত। ঘেরের পাড়ে সারি সারি মাচায় ঝুলছে তাজা শসা। খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘেরের পাড়ে এমন শসা চাষ পাল্টে দিয়েছে অন্তত ২৮ গ্রামের চিত্র।

 

বাজারে শসার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসির ঝিলিক। খেত থেকে শসা তুলে এনে স্থানীয় আড়তে ন্যায্যমূল্যে শসা বিক্রি করতে পেরে আনন্দিত কৃষকরা।

 

রূপসা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার দুর্জ্জনী মহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়ির চর, সিঁন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুন দিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী, চাঁদপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রামে মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে এ বছর শসা চাষ হয়েছে। তবে ঘাটভোগ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি জমিতে শসা চাষ হয়েছে।

 

আনন্দনগর গ্রামের কৃষক নূরু শেখ বলেন, ‘এ বছর মাছের ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে গ্রিন লাইন নামক হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছি। বীজ, সার, মাচা, শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ মণ শসা স্থানীয় আড়তে পাইকারি দরে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আরো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।‘

 

পুটিমারি গ্রামের মিজান মুন্সি বলেন, ‘ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৪০০ টাকা দরে ৭০ মণ শসা ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরকম দাম থাকলে আরো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শসার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি।’

 

নুরু শেখ ও মিজান মুন্সির মতো আনন্দনগর গ্রামের আবুল হাসান, আল আমিন, মোজাহিদ, ইকরাম, কালু, মাসুম, নোমান, হাবিব, টিপু, সহিদ, আজগার ,জসিম, রিপন, ইমাম, নজরুল, সিরাজ, ইউসুফসহ শতাধিক কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

 

ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত শসা কেনা-বেচার জন্য রূপসার গ্রামে গ্রামে গড়ে গড়ে উঠেছে মৌসুমি আড়ত। তাই শসা বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। স্থানীয়ভাবে এ আড়তকে ‘গালা’ বলা হয়। কৃষকরা খেত থেকে শসা তুলে এনে গালায় বিক্রি করেন।

 

শসা চাষে নারী ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে এখানকার শসা। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা টাটকা ও তাজা শসা কিনতে পেরে খুশি।

 

এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতেও মাঠ পর্যায়ে শসা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘বসতবাড়ি কিংবা মাঠের চেয়ে ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় ঘেরের পাড়ে শসা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ঘেরে শুধু মাছ ও ধান চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, ঘেরের পাড়ে শসা ও অন্যান্য শাক-সবজি চাষ করায় এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।’

 

এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ঘেরের পাড়ে শসা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় দিন দিন শসা চাষ বাড়ছে। উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *