করোনায় চার লাখ প্রবাসী নিঃস্ব, বিপন্ন তাঁদের পরিবার

নজর২৪ ডেস্ক- মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ছুটিতে আসেন প্রায় দুই লাখ প্রবাসী। তাঁরা ফিরতে পারছেন না। সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ফিরে এসেছেন আরও এক লাখ কর্মী। এই চার লাখ কর্মী নিঃস্ব হয়ে গেছেন, বিপন্ন হয়ে পড়েছে তাঁদের পরিবার। গড়ে প্রতিদিন ফিরে আসছেন দুই হাজার কর্মী।

 

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক বলছে, করোনায় যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পরও ফিরে এসেছেন অনেক প্রবাসী কর্মী। শুরুর দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল ভাড়া করা বিশেষ ফ্লাইটে। গত মাস থেকে নিয়মিত ফ্লাইটে। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ফিরেছেন ৯৫ হাজার ৬২ জন। এঁদের বড় অংশকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ১৬ দিনেই এসেছে ৩১ হাজার প্রবাসী। আর শেষ চার দিনেই এসেছেন প্রায় ১০ হাজার কর্মী। ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে নারী কর্মী আছেন ৬ হাজার ৬৫৬ জন। ফিরে আসা কর্মীদের করোনার নেগেটিভ সনদ থাকলে বাসায়, আর না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গনিরোধে (কোয়ারেন্টিন) পাঠানো হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে। দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। পাচ্ছেন না কোনো সাহায্য। অনেকে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।

 

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ফিরে আসা কর্মীদের একটি বড় অংশ অবৈধ হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে কাটিয়ে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন ২০ হাজার ৮২৯ জন কর্মী। কারাভোগ করে কুয়েত থেকে ৭ হাজার ৯৪১ এবং ওমান থেকে এসেছেন ৫ হাজার ৭১৩ জন। এ ছাড়া কাজ না থাকায় মালদ্বীপ থেকে প্রায় সাড়ে আট হাজার, কাতার থেকে ৭ হাজার ৭৬৯ জন ও মালয়েশিয়া থেকে প্রায় তিন হাজার জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একইভাবে সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, বাহরাইন, লেবানন, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ভিয়েতনামসহ নানা দেশ থেকে ফিরে আসছেন কর্মীরা। সংখ্যায় কম হলেও কেউ কেউ ফিরেছেন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায়।

 

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ মুভমেন্ট ইউনিট (রামরু) ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, শ্রমবাজারে কর্মীদের নিয়ে গিয়ে যারা প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিঃস্ব অসহায় শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে। এসব প্রবাসীর অপরাধটা কী? যারা প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার কাজ করছে তাদের কি ধরার কোনো জায়গা নেই? করোনাকালীন নিঃস্ব হয়ে এসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। বিদেশের বাজারে যেখানে সাজা মওকুফ হচ্ছে, সেখানে দেশে এসে কেন তাদেরকে দ্বিতীয় মেয়াদে সাজা ভোগ করতে হবে? ভুক্তভোগী এসব প্রবাসীর পরিবারগুলোর কী হবে তাহলে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *