ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতার হুম’কি, প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফেনীর দিদারুল

আবদুল্লাহ রিয়েল, ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীর সোনাগাজীতে যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল হক শাহীনের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকি থেকে রেহাই পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছে দিদারুল আলম নামে এক ভুক্তভোগী।

 

সোমবার রাত ৯টায় সোনাগাজী রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে দাবি করে ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাংসদ মাসুদ উদ্দিন চৌধূরী, ফেনী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসির সহযোগিতাও কামনা করছেন।

 

ভুক্তোভোগী দিদারুল আলম দাবি করেন, তিনি একজন সহজ, সরল ও নিরিহ মানুষ। তারা ৪ ভাই ও ২ বোন দেশের প্রচলিত আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। তার এক ভাই মো. নুর নবী একজন অসহায় দিনমুজুর। সে স্ত্রী ও ৩ জন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে জীবনযাপন করে আসছে।

 

তার একমাত্র কন্যা সোনাগাজী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেনির ছাত্রী। তার সাথে চরগণেশ গ্রামের সফি উল্যাহর ছেলে জাফর উল্যাহর সাথে দীর্ঘ দুই বছর পূর্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সুবাধে জাফর উল্যাহর সাথে তার ভাতিজীকে বিয়ে দিতে তারা পারিবারিকভাবে সম্মত হন। তারই ধারাবাহিকতায় জাফর উল্যাহ তাদের বাড়িতে আসা যাওয়াও করেন।

 

দুই পরিবারের অভিভাবকদ্বয় আরও কিছুদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। জাফর উল্যাহ বিয়ের ব্যাপারে তার পিতার সাথে চুড়ান্ত আলোচনা শেষে বিষয়টি জানাতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাদের বাড়িতে যান। বাড়ির উঠানে বসে তার ভাই, ভাবী ও তার স্ত্রীর সাথে বিয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করছিল জাফর।

 

আলোচনার সময় এলাকার ৭-৮ জন বখাটে যুবক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জাফর উল্যাহর উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। তিনি, তার ভাই নূরনবী ও পরিবারের সদস্যরা হামলাকারীদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা তাদের উপরও চড়াও হয়। তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে সে তার ভাই, ভাতিজি ও জাফর উল্যাহকে থানায় সোপর্দ করার হুমকি দেয়।

 

একপর্যায়ে তারা দুইজনকে বিয়ে পড়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করে। তারা তাদেরকে অনুনয় করে বলেন, তাদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে, কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে আরও কিছুদিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেবেন। একপর্যায়ে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে তাদেরকে সপরিবারে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেবে বলে হুমকি প্রদান করেন। অন্যথায় তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।

 

একপর্যায়ে তারা বর্ণিত জাফর উল্যাহর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং তার ভাই নুর নবী ও বৃদ্ধা মাতা হালিমা খাতুনের নামে থাকা ২ শতক বসতবাড়ির পুকুরের অংশ একই বাড়ির দেলোয়ার হোসেনের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে সমাজপতি আবুল বশর, নশা মিয়া ও আবদুর রব বায়না পত্র করে ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।

 

পশ্চিম ভোয়াগ কৃষাণ কল্যাণ সমাজের মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে ওই সমাজের উপদেষ্টা আবুল বশর, একই গ্রামের নুর আহাম্মদরে ছেলে, (বর্ণিত সমাজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি নশা মিয়া ও একই সমাজের আবদুল কাদেরের ছেলে, সমাজের সভাপতি আবদুর রব উক্ত টাকাগুলো নিয়ে বিয়ের স্বর্ণলংকার ও ফুলসাজানী কিনবে বলে আশ্বাস দেন। একপর্যায়ে তাদের চাপে জাফর উল্যাহর সাথে তার ভাতিজির সাথে ৪ লাখ টাকা দেন মোহরের বিনিময়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর তাদেরকে স্বর্ণলংকার ও ফুলসাজানী কেনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা উল্টো বখাটে মাস্তানদের জন্য এবং সমাজপতিদের জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

 

তারা নিরুপায় হয়ে সমাজ পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মো. আবদুল্লাহ মিয়ার নিকট প্রতিকার চেয়ে সমাজপতি আবুল বশর, নশা মিয়া ও আবদুর রব গংদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

 

৪ অক্টোবর রোববার দুপুর ২টার দিকে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে, মহিপাল কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী আবদুর রহমান আদিলকে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আমিনুল হক শাহিন একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের ভোয়াগ গ্রামস্থ বসত ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তার ছেলেকে জিম্মি করে তার মুঠোফোন দিয়ে দিদারকে শাহাদাতের বাড়িতে যেতে বলেন। যাওয়ার সময় দিদার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজুল ইসলামকে সঙ্গে করে শাহাদাতের বাড়িতে যান। সেখানে যাওয়ার পর শাহাদাত ও শাহীন সমাজপতিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করেন।

 

একপর্যায়ে তারা তাকে অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে পিতা-পুত্রকে ১ কেজি গাঁজা, ৩০০ পিচ ইয়াবা ও একটি বন্দুক দিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে থানায় সোপর্দ করবে বলে ভয় দেখায়। তাতে তিনি রাজি না হলে এক পর্যায়ে তারা পিতা-পুত্র দুইজনকে সমাজের প্রধান উপদেষ্টা আবদুল্লাহ মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আবদুল্লাহ মিয়ার কাছে গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য বললে আবদুল্লাহ মিয়া বিষয়টি বুঝতে পেরে কৌশলে অসুস্থ্যতার কারণ দেখিয়ে যেভাবে হোক বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করে দেয়ার জন্য মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবুর নিকট একটি চিরকুট লেখে পাঠান।

 

চিরকুট নিয়ে ৫ অক্টোবর সোমবার চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম খোকনকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যুবলীগ নেতা শাহাদাত ও ছাত্রলীগ নেতা শাহীন সংঘবদ্ধ একদল সন্ত্রাসী নিয়ে ৫ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তুলে আনার জন্য শান্তিনগর নামক স্থানে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে দাবি করেন।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা শাহাদাত ও ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *