নজর২৪ ডেস্ক- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজ ঘরে সংঘবদ্ধভাবে বিবস্ত্র করে মুখমণ্ডলে লাথি মারাসহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটনা ‘ষড়যন্ত্র’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
তিনি বলেন, এমন বীভৎসতা স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। বিশেষ করে বিবস্ত্র করার পর ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা ভয়ঙ্কার এবং কুরুচিপূর্ণ ঘটনা। অধিকতর তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গণমাধ্যমে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, এটিকে একটি নিছক সামাজিক অপরাধ বলা যায় না। মিডিয়ায় নির্যাতনের বর্ণনা দেখলাম। গা শিউরে উঠল। এর থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। আমার কাছে ষড়যন্ত্র মনে হয়েছে। তবে তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, অপরাধীদের আটক করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হবে। জিজ্ঞাসাবাদেই সব বেরিয়ে আসবে। বিচারের ব্যাপারে আপনারা অবগত। আমাদের প্রসিকিউশন শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে আলোচিত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে। এমন মামলাগুলো সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আমলে নিয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। অপরাধীরা সাজাও পাচ্ছে। এটি তো প্রমাণিত হচ্ছে। এই ধারা চলবেই।
তিনি আরো বলেন, কী কারণে সমাজের এই অস্থিরতা, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। অস্থিরতা, কুরুচি, নাকি ষড়যন্ত্র তা নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্যাতনের সময় ভিডিও করে তা আপলোড করার বিশেষ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এসব অপরাধ কেনো ঘটছে আমরা সিরিয়াসলি খুঁজে বের করবো।
এর আগে, ঘটনার ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও আইসিটি আইনে সোমবার (৫ অক্টোবর) রাত ১টায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রধান আসামিসহ ৪ জনকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ ও র্যাব-১১।
আজ সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে ও স্থানীয় দুর্ধর্ষ দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে র্যাব-১১। আটক বাদল (২২) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সি বাড়ির ছেলে। আর দেলোয়ার একই গ্রামের কামাল উদ্দিন বেপারি বাড়ির সাইদুল হকের ছেলে।
এর আগে, গতকাল বিকালে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিধন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. রহিম (২০) ও রাতে একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহকে (৪১) গ্রেফতার করে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ।
মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর তার স্বামী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও রাতযাপন করার সময় বাদলের নেতৃত্বে উল্লেখিত আসামিরাসহ আরও ৭/৮ জন লাথি মেরে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। আসামিরা তার স্বামীকে মারধর করে পাশের রুমে নিয়ে বেঁধে রাখে। এরপর টর্চলাইট জ্বালিয়ে তাকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।
এ সময় পুরো ঘটনা তারা তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। এরপর ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে বোনের বাড়িতে গেলে সেখানেও তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আসামিরা তাকে কু-প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় তারা সে রাতে ধারণ করা ভিডিও ফাঁস করে দেয়। এতদিন তিনি আসামিদের ভয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস করেননি। তবে পুলিশই খোঁজ নিয়ে তাকে উদ্ধার করলে তিনি সাহস পান, পরে পুরো ঘটনা প্রকাশ পায়।