নজর২৪, ঢাকা- করো’নার কারণে ঘরবন্দি শিশুদের প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টার জন্য ঘরের বাইরে, পার্কে কিংবা অন্য কোথাও খেলাধুলা ও ছোটাছুটির জন্য নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিজনিত কারণে স্কুল খোলা যাচ্ছে না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, যা খুবই কষ্টের। ঘরের মধ্যে বসে থেকে শিশুদের করার কিছু থাকে না। যৌথ পরিবারের শিশুরা পরিবারের একাধিক সদস্য ও সমবয়সীদের সঙ্গে কথাবার্তা ও খেলাধুলা করে সময় কাটালেও একক পরিবারের শিশুরা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘরবন্দি এসব শিশুদের প্রতিদিন বাইরে নিয়ে যেতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের খোলা বাতাসে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ দিতে হবে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২০’র উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
এসময় ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে নিহত পরিবারের সদস্য ও শিশুদের হারানো কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই ছিল মাত্র ১০ বছরের একটি শিশু। ঘাতকের দল তাকেও ছাড়েনি। সেই সাথে আরও কয়েকজন শিশুকে তারা হত্যা করে। আমার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ছোট শিশু সুকান্ত তাকে হত্যা করেছে। আমার ফুফাতো ভাই ১০ বছরের আরিফ, রাসেলের খেলার সাথী তাকে হত্যা করেছে। আমাদের বাড়িতে কাজ করতে পোটকা এবং পোটকার মা, ছোট্ট বাচ্চা ছেলে মাত্র ৫/৬ বছর বয়স। তাকেও খুনিরা ছাড়ে নাই।’
‘আর কখনও যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। সেটাই আমরা চাই। কিন্তু তারপরও আমরা দেখি বিশ্বের নানা ধরনের সংঘাত, যখন দেখি কোন শিশুর অকাল মৃত্যু সেটা সত্যি আমার ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক, বা বিদেশেই হোক, বঙ্গোপসাগরেই হোক, ভূমধ্যসাগেরর পাড়েই হোক, প্রতিটি ঘটনাই আমাদের নাড়া দেয়। কিন্তু আমরা চাই, শিশুদের জন্য এই পৃথিবীটা একটা নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ বাসযোগ্য স্থান হোক’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় স্বাধীনতার পর জাতির পিতার নেতৃত্বে শিশু অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবন্ধীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে শিক্ষাবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের কোনো স্তরের কেউ বাদ না যায় সেই সাথে আমরা তাদের বিশেষ ভাতা দিয়ে থাকি। শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন হলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে যেন বিচার করা যায় সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিরাপত্তা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে দুই শিশুর বক্তব্যের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো মনে করি তাদের বক্তব্য এতো সুন্দর, ভবিষ্যতে তারা খুব ভাল বক্তা হতে পারবে। নেতাও হতে পারবে, নেতৃত্বও দিতে পারবে আর আজকের এই শিশুদের মধ্যে থেকেই তো কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা বৈজ্ঞানিক- অনেকেই অনেক কিছু হতে পারবে। আর আমরা সে ধরনের বহুমুখী জ্ঞান বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় সব আমরা করে দিচ্ছি যাতে বহুমুখী শিক্ষাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হয়। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে বাঙালি জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে। সেটাই আমরা চাই।’