এক বিচিত্র এবং রহস্যময় গোরস্থানের কাহিনী

চিত্র-বিচিত্র ডেস্ক- মাস শেষ হতে না হতেই বাড়িওয়ালা আপনার দরজায় এসে নক করবে। ভাড়াটা দিয়ে দিন, ভাড়া দিতে ভালো লাগুক বা খারাপ লাগুক। ভাড়া দিতে না চাইলে বাসাটাই ছেড়ে দিন। একমাত্র মরে গিয়ে কবরে গেলেই তবে এই বাড়িভাড়া আদায়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। মজার বিষয় কি জানেন? পৃথিবীতে এমন জায়গাও আছে যেখানে কবরে থাকতে হলেও ভাড়া দিতে হয়!

 

দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশের নাম গুয়েতেমালা। এ দেশের রাজধানী গুয়েতেমালা সিটিতে ‘লা ভারবিনা’ নামে বড় একটি কবরস্থান আছে। লা ভারবিনা কবরস্থানটি আমাদের পরিচিত কবরস্থানের মতো নয়। মূলত এটি ইট সিমেন্ট দিয়ে বানানো পাকা দালানের সমষ্টি। দেখলে মনে হবে যেন বহুতল আবাসিক ভবন। ভবনের দেয়ালে লাশের কফিন রাখার মতো ফাঁকা জায়গা থাকে। সেখানে কফিন ঢুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে প্লাস্টার করে দেয়া হয়। এ ধরনের পাকা দালানের কবরস্থানকে বলা হয় ক্রিপ্ট।

 

এই লা ভারবিনা নামক কবরস্থানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে কবরে থাকতে হলে ভাড়া গুনতে হবে।

 

অবশ্য কবরস্থানের কর্তৃপক্ষ এত নির্দয় নয়। তাই দাফন করার পর প্রথম ছয় বছর একদম ফ্রি। এই ছয় বছরে মৃতদের কোনো রকম বিরক্ত করা হয় না। তবে ছয় বছর শেষে পরবর্তী প্রতি চার বছরের জন্য অগ্রিম চব্বিশ ডলার জমা দিতে হয়। এই টাকাটা মৃতের পক্ষে তার স্বজনেরা জমা দিলেই চলে। কিন্তু যদি কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষে টাকা জমা না পড়ে, তখনই কর্তৃপক্ষ কঠোর হয়ে যান।

 

এরপর যে কাজটা করা হয় তা সত্যিই ভয়ানক। যেই লাশগুলোর পক্ষে টাকা জমা পড়েনি তাদের কবরটা লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়। তারপর কোনো একদিন সকালে কবরস্থানের কর্মীরা এসে অনাদায়ী লাশের কবর ভেঙে মৃত পচে গলে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া লাশগুলোকে বের করে ফেলেন। সব হাড়গোড় কঙ্কাল বস্তায় অথবা পলিব্যগে ঢোকানো হয়। তার পর এসব বেওয়ারিশ লাশ শহরের নির্দিষ্ট ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হয়। সেই ভাগাড়ে সব লাশের অন্তিম ঠিকানা হয় গণকবর।

 

লা ভারবিনা কবরস্থানের যে কবরটি থেকে পুরনো মৃতদেহ বহিষ্কৃত হয় সেই কবরটাকে কিন্তু কর্তৃপক্ষ এমনি এমনি খালি রাখেন না। সেই কবরটিকে আবার ধুয়ে মুছে সেখানে তোলা হয় সদ্য মৃত কোনো ব্যক্তিকে।

 

এভাবেই চলতে থাকে লা ভারবিনা গোরস্থানের পরজীবন।
বুঝলেন তো ভাই, বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে বেঁচেই গেলেন। আমাদের এই দেশে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে কষ্ট হলেও মরে যাওয়ার পর কবরে শান্তিতেই থাকা যায়। অন্তত লা ভারবিনা গোরস্থানের এসব ভয়ানক পরিস্থিতিতে আপনাকে পড়তে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *