নজর২৪ ডেস্ক- নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কঠোর নিরাপত্তা ও নির্দেশনার পরও রোহিঙ্গাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পৌঁছে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়াও পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিদ্যমান ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাচ্ছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সীমান্ত এলাকায় ভোটের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন রোহিঙ্গারা। এদিকে কোন কোন রোহিঙ্গা ভোটার ১৫ বছর বয়স বাড়িয়ে তালিকায় ঢুকে নিচ্ছেন বয়স্ক ভাতাও।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। এদিকে চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনে উঠে আসে ঘুমধুম ইউনিয়নের ভোটার তালিকার একজন রোহিঙ্গার নাম। তিনি পেশায় একজ ভ্যানচালক। রোহিঙ্গা শরনার্থী হিসেবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এদেশে এসে ভোটারও হয়েছেন। বয়স ৫২ হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ১৫ বছর বাড়িয়ে নিচ্ছেন বয়স্ক ভাতাও।
আর এতকিছু সম্ভব হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কল্যাণে। এলাকাবাসী সবাই তার রোহিঙ্গা পরিচয় ও এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা জানলেও স্থানীয় মেম্বার জানেন না কিছুই।
এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, নাইক্ষ্যংছড়িতে দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ভোটাররা। উপজেলা থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে তাদের এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ নিয়ে সহজে মুখও খুলতে চান না অনেকে।
কিন্তু রোহিঙ্গা ভোটারদের বিরুদ্ধে কথা বলতে জনপ্রতিনিধিদের কিসের ভয়? এ জনপদের বাসিন্দারা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখছে রোহিঙ্গারা। ফলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি রাজনীতির বলয় ছাপিয়ে এই অঞ্চলে আলাদা দুটি ধারা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা বান্ধব আর বিরোধী।
ঘুমধুমের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনীতি আর টাকার খেলায় ১৩ রোহিঙ্গা বাদ পড়েছেন ভোটার তালিকা থেকে। বাকিরা আছেন বহাল তবিয়তেই।
শুধু নাইক্ষ্যংছড়িই নয়, এই রোহিঙ্গাদের অনেকে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার, রামু, সাতকানিয়াসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে। কেউ কেউ আবার পাসপোর্ট নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশেও।
এদিকে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে আটক হন এক রোহিঙ্গা নারী। তার কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি জাতীয় পরিচয়পত্র। ঐ রোহিঙ্গা নারীর হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ঘটনায় টনক নড়ে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের।
নির্বাচন কমিশন তদন্তে নেমে পায় অবাক করা তথ্য। কমিশনের কিছু দুর্নীতিবাজ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল চক্রের সমন্বয়ে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেওয়ার মিশন। ঐ ঘটনায় তাদের আটকসহ ও বরখাস্তও করা হয় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীকে।