রিফাত হত্যার মাস্টারমাইন্ড স্ত্রী মিন্নি: আদালত

নজর২৪, বরগুনা- বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিও রয়েছেন। সকাল থেকেই এই রায়ের ব্যাপারে দেশবাসীর ছিল শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। বিশেষকরে মিন্নির ব্যাপারে কী রায় দেয় আদালত, সেদিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। অতঃপর তার ফাঁসির ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

 

আজ বুধবার দুপুর দেড়টার কিছুক্ষণ পর এই রায় ঘোষণা করা হয়। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান রায় পড়ে শোনান। দীর্ঘ এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রিফাত হত্যায় অভিযুক্ত করা হয়েছে মোট ২৪ জনকে। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনের ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি ৪ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

 

মিন্নির ফাঁসির আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, এই রায় প্রত্যাশিত ছিল। কারণ আমরা অভিযোগের পক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল খুন হওয়া রিফাতের স্ত্রী মিন্নি, সেটাও প্রমাণ হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মিন্নি। তারই পরিকল্পনায় রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

 

এই রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)। এছাড়া এ মামলায় চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।

 

১০ আসামির মধ্যে মুসা পলাতক ও মিন্নি জামিনে রয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় বাকিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মামলার ৭ নম্বর আসামি ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এবং বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৮ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

 

গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

 

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *