নজর২৪, বরগুনা- বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষায় তার পরিবার। করোনার সংক্রমণে আদালত বন্ধ থাকাসহ দীর্ঘ এক বছরের বিচারিক কার্যক্রম শেষে আজ বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।
রায় শুনতে আসা বরগুনা জেলা জজ আদালত চত্ত্বরে নিহত রিফাতের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসময় তিনি বলেন, মিন্নির মতো মেয়ে যেন আর কারো ঘরে না জন্মায়। এ মেয়েটার জন্য দুইটা ছেলের জীবন অকালে ঝরে গেছে আরও ২৪টা ছেলের জীবন ঝুলছে। আমি এই মেয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শাস্তি প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক আর যারা জড়িত না তারা মুক্তি পাক। তবে মিন্নির মতো মেয়ে যেন আর কারো ঘরে না জন্মায়। আমি প্রত্যাশা করি, মিন্নির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক। আমরা যেমন রিফাতের কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তার বাবা-মাও যেন কারাগারের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এর আগে রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ বলেন, আমরা ভাইয়াকে তো আর ফিরে পাব না। মিন্নিসহ সব খুনির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাব। ভাইয়ার আত্মাও শান্তি পাবে।
ইসরাত জাহান মৌ বলেন, আমরা দুই ভাই-বোন। ভাই ছিল কলিজার টুকরা। ভাই ছিল আমার সাহস ও ভরসা। ভাইকে হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব। ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
রিফাতের মা ডেইজি আক্তার বলেন, ‘আমি সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
এ হত্যাকাণ্ডের কঠিন বিচার চেয়ে রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, গত এক বছর ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে রিফাতের মুখ। রিফাতকে নিয়ে আমি বরিশাল পর্যন্ত গেছি। নিস্তেজ শরীরে আমি রিফাতের বেঁচে থাকার আকুতি দেখেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, বন্ড বাহিনী একটি নৃশংস খুনের মাধ্যমে বরগুনাকে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত করেছে। তারা এক মায়ের বুক খালি করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন রিফাত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা। এ মামলায় মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেন নিহত রিফাতর বাবা দুলাল শরীফ।
হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গত বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
টানা ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাবার বাড়িতেই ছিলেন মিন্নি।
মিন্নির পরিবারের দাবি তিনি নির্দোষ। স্বামীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি।