নজর২৪, সিলেট- সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা এসেছে নির্যাতিত নববধূর স্বামীর দায়ের করা মামলায়। ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্বামীকে মারধর করে নববধূকে প্রাইভেটকারেই গণধর্ষণ করেন। হায়েনাদের হাত থেকে স্ত্রীকে রক্ষায় পায়ে ধরে কেঁদেও মন গলাতে পারেননি স্বামী।
উপরন্তু ধর্ষণের পর নববধূর গলা থেকে সোনার চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। এমনকি তার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ধর্ষণের পর প্রাইভেটকার ছাড়িয়ে নিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সেদিনের সন্ধ্যা রাতের আলো-আধারি খেলায় তাদের কোনো আর্তনাদই উন্মাতাল হায়েনাদের মন গলাতে পারেনি।
শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটা এই ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার সিলেটে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন ওই তরুণীর স্বামী। মামলার এজাহারে তিনি এসব অভিযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন- আজ তরুণীর পক্ষে ছিলেন শতাধিক আইনজীবী, ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়াননি একজনও
এজহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত শুক্রবার আনুমানিক বিকাল ৫টায় তিনি স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতে যান। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ৮ টার দিকে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে পাকা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পাশের দোকানে যান। এসময় কয়েকজন স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন।
এজাহারে বাদী উল্লেখ, তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে আসামী সাইফুর রহমান এবং অর্জুন লস্কর তাকে চর থাপ্পর মারতে থাকেন। পরে আসামীরা স্ত্রীসহ তাকে গাড়িতে তুলে জোরপূর্বক গাড়িতে ওঠিয়ে নেন। এসময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালান। এবং তাদের পেছনের সিটে বসিয়ে আসামী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাদের সাথে পাশে বসেন। এছাড়া শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে ওঠে বসে। তার গাড়ি নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস প্রাঙ্গনের ৭ নং ব্লকের ৫ তলা নতুন ভবনের দুক্ষিণপূর্ব কোনে খালি জায়গায় দাঁড় করায়। এরপর অন্য আসামীরা মোটরসাইকেলযোগে পিছনে পিছনে ঘটনাস্থলে যায়।
নির্যাতিতা তরুণীর স্বামী বলেন, ছাত্রাবাস চত্বরে যাওয়ার পর তরিকুল তার মানিব্যাগ থেকে ২ হাজার টাকা এবং শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি তার স্ত্রী কানের দুল ও অর্জুন লস্কর স্ত্রীর গলার সোনার চেইন কেড়ে নেয়। পরে স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন বাদীকে ৭ নং ব্লকের পশ্চিম পাশে নিয়ে যায়। এসময় সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভিতরেই তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তখন স্ত্রীর চিৎকার শুনে স্ত্রীকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে গেলে আসামীরা তাকে মারধর করে আটকে রাখে।
আরও পড়ুন- লুঙ্গি পরে পালাতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগকর্মী মাসুম
তরুণীর স্বামী বলেন, আধঘন্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার নিকট আসলে আসামীরা প্রাইভেটকার আটকে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে বলে এবং ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কার ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলে। এসময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে কলেজে ছাত্রাবাসের গেইটে যান। তিনি এসময় সিএনজি যোগে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে পুলিশে সংবাদ দেন।
এ ঘটনায় তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত এজাহারভূক্ত ৫ জনসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।