নজর২৪ ডেস্ক- সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কক্ষে নয়, স্বামীর প্রাইভেট কারের ভেতরেই স্ত্রীকে পালাক্রমে ‘নির্যাতন’ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। মামলাই এমনটাই উল্লেখ করেছেন মামলার বাদি ও ওই নববধূর স্বামী।
এমসি কলেজের হোস্টেলে গণধর্ষণের মামালার বাদি গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৩টায় শাহপরাণ থানায় এজহার দাখিল করেন। পরে এটি এফআইআর করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ, গত ২৫ সেপ্টেম্বর আনুমানিক বিকাল ৫টায় তিনি স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতে যান। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ৮ টার দিকে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে পাকা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পাশের দোকানে সিগারেট কেনার জন্য নামতেই ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান মাসুমসহ আরো ২/৩ জন তার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন।
সাথে সাথে স্বামী এর প্রতিবাদ করলে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাকে চড়-থাপ্পর মারতে থাকে। তখন তার স্ত্রীও গাড়ি থেকে নেমে এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা স্বামী-স্ত্রীকে ধমক দিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে ওঠিয়ে নেয়। এসময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে এবং স্বামী-স্ত্রীকে পিছনের সিটে ওঠিয়ে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাদের সাথে পিছনের সিটে ওঠে বসে। আর শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে ওঠে বসে। পরে তরিকুল ইসলাম গাড়ি চালিয়ে এমসি কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনের ৭ নং ব্লকের ৫ তলা নতুন বিল্ডিং এর দক্ষিণপূর্ব কোণে খালি জায়গায় দাঁড় করায়। অন্যরা তখন মোটরসাইকেলযোগে পিছনে পিছনে ঘটনাস্থলে যায়।
এসময় তরিকুল স্বামীর মানিব্যাগ থেকে ২ হাজার টাকা এবং শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি নববধূরর কানের দুল ও অর্জুন লস্কর গলার সোনার চেইন কেড়ে নেয়। এসময় চিৎকার করলে আসামিরা নববধূর মুখ চেপে ধরে।
পরে স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন স্বামীকে ৭ নং ব্লকের পশ্চিমপাশে নিয়ে যায়। এসময় নববধূল স্বামীকে কথা বলায় ব্যস্ত রেখে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, মাহমুবু রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভিতরেই নববধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তখন স্ত্রীর চিৎকার শুনে স্ত্রীকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে গেলে আসামিরা তাকে মারধর করে এবং আটকে রাখে।
আধাঘন্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে স্বামীল নিকট আসলে আসামিরা তারে প্রাইভেট কার আটকে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে বলে এবং ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়িে নিয়ে যেতে বললে বিদি স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে কলেজে হোস্টেলের গেটে যান এবং একটি সিএনজি অটোরিকশা ডেকে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে পুলিশকে সব জানান।
এদিকে, ধর্ষণ করার সময় ৫ তলা বিল্ডিং-এর দ্বিতীয় তলায় বারান্দায় একজন ছেলে আসলে তাকে চলে যেতে বলে ধর্ষকরা। পুলিশের সহায়তায় বাদি পরে ৭ নং ব্লকে তার গাড়িটি পুলিশকে দেখান এবং দ্বিতীয় তলার ছেলেটিকে শনাক্ত করেন। ছেলেটি তার নাম হৃদয় পারভেজ বলে জানায়। তখন হৃদয় পারভেজ জানায়, সে যখন বারান্দায় এসেছিলো তখন তার রুমেমেট (৩ নং আসামি) শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রণি তাকে চলে যেতে বলে।
এসময় হোস্টেলের অন্য ছাত্ররা মোবাইলে রনিসহ অন্য আসামিদের ছবি দেখায়। এসময় স্বামী-স্ত্রী ছাত্রলীগের ৬ জনকে শনাক্ত করেন এবং তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারেন। অন্য আরও ২/৩ জন আসামির পরিচয় জানতে পারেননি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাদি গড়ি ও ওদের ব্যবহৃত ১টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে। পরে পুলিশের সহায়তায় তাঁর স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এজহার দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও পলাতক রয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫) ও তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮)। তাদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।
মামলার বাদী গৃহবধূর স্বামী আক্ষেপের সঙ্গে জানান, মাত্র ৩ মাস হলো বিয়ে হয়েছে তাদের। খুব সুখেই দিন যাচ্ছিল। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে নিজেদের প্রাইভেট কারে করে ঘুরতে বের হন। শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করার পর দক্ষিণ সুরমার বাড়িতে ফিরছিলেন তারা। এমসি কলেজের গেটের সামনে কার রেখে সিগারেট কিনতে যাওয়া তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।